TIDE : Class 10 Geography || জোয়ার-ভাটা দশম শ্রেণী ভূগোল || WBBSE

 প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি হয় না কেন ?

পৃথিবী তার মেরু অক্ষের  উপর প্রতি 24 ঘণ্টায় পশ্চিম থেকে পূর্বে একবার আবর্তন করে এবং চাঁদ নিজের কক্ষপথে পৃথিবীর আবর্তন এর দিক অনুসারে প্রতি 27 দিনে পৃথিবীকে একবার পরিক্রমণ করে। কাজেই পৃথিবীর  যে স্থান চাঁদের সামনে থাকার ফলে মুখ্য জোয়ার হয়েছিল,  24 ঘন্টা পরে সম্পূর্ণরূপে আবর্তন করে ওই স্থানটি যখন পূর্বের স্থানে ফিরে আসেতখন চাঁদ তার কক্ষপথে ( 360 / 27) বা প্রায়  13 ডিগ্রী পথ এগিয়ে যায়। কাজেই পৃথিবীর  ওই স্থানটিকে  আরো 13 ডিগ্রী পথ অতিক্রম করলে চাঁদের সম্মুখে উপনীত হয়।  এই 13 ডিগ্রী পর আবর্তন করতে পৃথিবীর সময় লাগে  ( 1440/360 ) X 13 = 52 মিনিট।  অর্থাৎ পৃথিবীর কোন  একটি স্থানে  মুখ্য জোয়ার থেকে পরবর্তী মুখ্য জোয়ার টি  ঠিক 24 ঘন্টা পরে না  হয়ে,  24 ঘন্টা 52 মিনিট পরে হয়।  তাই একটি মুখ্য জোয়ার থেকে পরবর্তী গৌণ  জোয়ারের ব্যবধান হয় 12 ঘন্টা 26 মিনিট।

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি হয় না কেন
 

জোয়ার ভাটা সৃষ্টির কারন গুলি কি কি  উপযুক্ত চিত্র দ্বারা ব্যাখ্যা কর ?

আধুনিক কালের   বিজ্ঞানীদের মতে জোয়ার-ভাটা  সৃষ্টির প্রধান কারন দুটি, যথা ১)  চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণ  এবং ২)  পৃথিবীর আবর্তন জনিত কারনে সৃষ্ট বিকর্ষণ  শক্তি।

১) চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণ

মহাজাগতিক নিয়ম অনুসারে প্রতিটি গ্রহ নক্ষত্র একে অপরকে আকর্ষণ করে।  এই আকর্ষণ বল দূরত্বের উপর নির্ভরশীল।  সৌরজগৎ এর অন্তর্গত প্রতিটি গ্রহ উপগ্রহ এবং সূর্য একে অপরকে আকর্ষণ করলেও অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ ও সূর্যের তুলনায়  চাঁদ ও পৃথিবী পরস্পর অনেক কাছাকাছি অবস্থান করে।  ফলে পৃথিবীর জলরাশির উপর  চাঁদের আকর্ষণ শক্তি সূর্যের আকর্ষণ শক্তির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ কার্যকরী।  এর ফলেপৃথিবীর যে অংশ  চাঁদের সামনে অবস্থান করে সেই  অংশের জলরাশি ফুলে ওঠে, এবং জোয়ারের সৃষ্টি করে। 

২)  পৃথিবীর আবর্তন জনিত কারণে সৃষ্ট  বিকর্ষণ শক্তি:

 পৃথিবীর নিজ অক্ষের উপর  ঘুরন্ত লাট্টুর মত আবর্তন করার ফলে কেন্দ্রমুখী ও কেন্দ্র বহির্মুখী এই দুই প্রকার শক্তি সৃষ্টি হয়।   যার ফলে পৃথিবী স্বাভাবিকভাবে সন্তুলন অবস্থায় থাকে।  কিন্তু চাঁদের আকর্ষনে  মুখ্য জোয়ারের সৃষ্টির ফলে জলরাশি চাঁদের দিকের স্থানে সরে যাওয়ায় পৃথিবীর ভরকেন্দ্র চাঁদের দিকে প্রায় 4800 কিমি সরে যায়। এর ফলে মুখ্য জোয়ারের ঠিক বিপরীত স্থানে কেন্দ্র বহির্মুখী শক্তি অধিক কার্যকরী হয়ে পড়ে। ফলে সমুদ্রের জল ফুলে  উঠে জোয়ারে সৃষ্টি করে।

পৃথিবীর ভরকেন্দ্র চাঁদের দিকে প্রায় 4800 কিমি সরে যায়
উক্ত দুই প্রধান কারণ ছাড়াও কোন কোন ভূবিজ্ঞানী পটভূমির নিকটবর্তী সমূদ্রের ঢাল ,জলস্তর এর ওঠানামার স্বাভাবিক সময়কাল এবং পৃথিবীর আবর্তন গতির আংশিক প্রভাব রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।


 

ভরা কোটাল ভরা জোয়ার কাকে বলে ?

জোয়ারের জলের  স্ফিতি  যদি সাধারণ অবস্থার তুলনায় অধিক হয় তখন তাকে বলে ভরা জোয়ার, মূলত অমাবস্যা তিথিতে চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করা পৃথিবীর জলরাশির উপর চাঁদ ও সূর্যের যুগ্মভাবে আকর্ষণ করে।  ফলে সমুদ্রের জলের স্ফিতি, স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় অনেক বেশি হয়। তাই একে ভরা কোটাল বা তেজ কটাল বা ভরা জোয়ার বলে।

 

পূর্ণিমার তুলনায়  অমাবস্যা তিথিতে জোয়ার তীব্র হয় কেন ?

অমাবস্যা এবং পূর্ণিমা তিথিতে চাঁদ, পৃথিবী এবং সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলেও পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবী চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে অবস্থান করে। তাই একই জায়গায় চাঁদ ও সূর্যের যুগ্মভাবে আকর্ষনের  প্রভাব  পরেনা।  কিন্তু অমাবস্যা তিথিতে চাঁদপৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে অবস্থান করে।  অর্থাৎ পৃথিবীর একই দিকে চাঁদ ও সূর্য অবস্থান করে। ফলে চাঁদ ও সূর্য যুগ্মভাবে পৃথিবীর  জলরাশিকে আকর্ষণ করে।  তাই পূর্ণিমা তুলনায় অমাবস্যায় জোয়ারে জলস্ফীতি অনেক বেশি হয়।

 

মরা কোটাল কাকে বলে ?

অষ্টমী নবমী তিথিতে চাঁদ, সূর্য এবং পৃথিবী পরস্পর সমকোণে বা  90 ডিগ্রী কোণে  অবস্থান করায় চাঁদের সামনে পৃথিবীর যে অংশটি আসে, সেখানে জলস্ফীতি ঘটে।  কিন্তু সমকোণে অবস্থিত সূর্যের আকর্ষনে  এই জলস্ফীতির  কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। অর্থাৎ জোয়ারের  জলস্ফীতি অধিক হতে পারেনা।  এইজন্যই এই জোয়ারকে মরা কোটাল বলে। 

 

বানডাকা কাকে বলে ?

মূলত বর্ষাকালে নদীতে ভাটার টান বেশি থাকায়, ভরা জোয়ারের জলরাশি নদীগর্ভে প্রবেশ করার সময় ভাটার টানের  সংঘর্ষে স্ফিত হয়ে প্রবল উঁচু তরঙ্গের আকারে স্বশব্দে প্রবেশ করে। এই সময় কোন কোন নদীর জল 6 থেকে 8 মিটার উপরে উঠে যায়।  একেই বলে বানডাকা।  হুগলী, টেমস্, ইয়াং-সিকিয়াং প্রভৃতি নদীতে এই প্রকার বানডাকা প্রায়ই বন্যার সৃষ্টি করে।




Share:

No comments:

Post a Comment

Popular Posts

Blog Archive

Recent Posts

Total Pageviews