পূর্ব ভারতের সার্বিক উন্নয়নে কলকাতা বন্দরের গুরুত্ব তুলে ধর?
বঙ্গোপসাগরের উপকূল থেকে প্রায় 128 কিলোমিটার অভ্যন্তরে এই কলকাতা নদী বন্দরটি অবস্থিত। বন্দরের পশ্চাৎভূমি পশ্চিমবঙ্গ বিহার উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল, ভুটান জুড়ে বিস্তারিত। এই পশ্চাৎ ভূমিটি কৃষি-শিল্প খনিজ ও বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ এবং ভারতের সর্বাপেক্ষা জনবহুল অঞ্চল গাঙ্গেয় সমভূমি, এবং, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথ, জাতীয় সড়ক ও অন্যান্য সড়কপথে, নৌপথে পূর্ব ভারত ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির সাথে যুক্ত রয়েছে। এই কলকাতা বন্দরের উপর ভিত্তি করে এই অঞ্চলে পাট, কার্পাস, বয়ন, লৌহ-ইস্পাত, মোটরগাড়্ কাগজ, রেল-ইঞ্জিন নির্মাণ, চিনি, রাসায়নিক দ্রব্য, ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্য প্রভৃতি শিল্পের সমাবেশ ঘটেছে। আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের চা, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, বিহারের কয়লা, আকরিক লোহা ও অভ্র, ওড়িশার আকরিক লোহা ও ম্যাঙ্গানিজ, উত্তরপ্রদেশের চামড়া, চিনি ও তৈলবীজ এই কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। অন্যদিকে এই বন্দরের মাধ্যমে যে সকল দ্রব্য আমদানী করা হয় তারমধ্যে খাদ্যশস্য, কাগজ, মোটরগাড়ি, রাসায়নিক, খনিজ আকরিক, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
কলকাতা বন্দরের সমস্যা সমাধানে তোমার মতামত ব্যাখ্যা কর ?
প্রাক স্বাধীনতার পূর্বে কলকাতা ছিল ভারতের শ্রেষ্ঠ বন্দর। বঙ্গোপসাগর থেকে 128 কিমি উজানে অবস্থিত এই কলকাতা বন্দরটিকে কেন্দ্র করে পূর্ব ভারতের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটে। বিগত এক শতাব্দীকাল পূর্বে এক ভূ-প্রাকৃতিক কারণে গঙ্গার মূল স্রোত পদ্মার গতিপথে বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায়, ভাগীরথী নদীতে দ্রুত হারে পলি জমা শুরু হয়। এবং একাধিক বালুচর গড়ে ওঠায় কলকাতা বন্দর আজ মুমূর্ষু প্রায়। এই সমস্যা থেকে কলকাতা বন্দরকে পলি মুক্ত করার জন্য সরকারিভাবে যে ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল -
১)
ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মাণ করে সহযোগী ফিডার
খালের মাধ্যমে ভাগীরথী তথা হুগলি নদীতে অতিরিক্ত জল সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ।
২)
ড্রেজার এর মাধ্যমে নিয়মিতভাবে পলি খননের কাজ
চালিয়ে যাওয়া।
৩)
পাইলট জাহাজের সাহায্যে বড় বড় জাহাজ গুলিকে
পথ দেখিয়ে বন্দরে প্রবেশ করানো।
৪)
সহকারি হিসেবে হুগলি ও হলদি নদীর মোহনায়
হলদিয়া বন্দর স্থাপন।
উক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্বেও কলকাতা বন্দরের
অবনতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তাই এই বন্দরের সমস্যা সমাধানে আরো দুটি বিকল্প
পথ অপরিহার্য।
১) বদ্বীপ অঞ্চলে কোন একটি উপযুক্ত বেছে নিয়ে বন্দর গড়ে তুলে কলকাতার সাথে তার রেলপথে যোগসুত্র স্থাপন করা।
২)
সুয়েজ
বা পানামা খালের ন্যায় অনুরো খালের সাহায্যে
কলকাতা বন্দরকে বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত করা।
বিকল্প পন্থা দুটির মধ্যে দ্বিতীয়ত টি অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ তাই আমাদের মতো দরিদ্র দেশের পক্ষে ইহা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ অনুসরণ করলে পূর্ব ভারতের অর্থনীতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
No comments:
Post a Comment