Atmosphere Class 10 Geography || বায়ুমণ্ডল দশম শ্রেণী ভূগোল || WBBSE

 বায়ুমণ্ডল কাকে বলে ?

ভূপৃষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বে প্রায় 10 হাজার কিমি পর্যন্ত যে অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পৃথিবী কে বেষ্টন করে রয়েছে এবং পৃথিবীর আবর্তন এর সাথে সমহারে  বা সমতালে আবর্তিত হচ্ছে,   সেই অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরণ কে  বায়ুমণ্ডল বা Atmosphere. 

 

বায়ুমণ্ডল এর কতকগুলি গ্যাসীয় উপাদান  যেমন-  নাইট্রোজেনঅক্সিজেনকার্বন ডাই অক্সাইডওজনক্রিপটনজেননমিথেন এবং সামান্য পরিমাণে জলীয় বাষ্পকার্বন কণা, ধাতব কনা  ও বহুপ্রকার বিজাতীয় পদার সমন্বয়ে গঠিত বায়ুমণ্ডলের এই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গঠন সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ থেকে পৃথিবীকে  শুধু  স্বাতন্ত্র্য করেনিএর প্রভাবে পৃথিবী হয়ে উঠেছে শস্য-শ্যামলা ও  প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর    প্রসঙ্গত বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরে ( ভূপৃষ্ঠ থেকে 100 কিমি পর্যন্ত )  পৃথিবীর উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের উপর প্রত্যক্ষ ভাবে প্রভাব ফেলেছে যা আবহাওয়া  বিদ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয়।

 

বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন  প্রকার উপাদান  বা গঠন চিত্র তুলেধর 

অতীতে বিজ্ঞানীগণ মনে করতেন বায়ুমণ্ডল একটিমাত্র উপাদানে গঠিত মৌলিক পদার্থ বিশেষ।  কিন্তু পরবর্তীকালে  বিজ্ঞানী প্রিক্টলী, ল্যাভসীয়ে, শীলে   প্রমূখ  বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন প্রকার উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত মিশ্র পদার্থ বিশেষ।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীগণ বায়ুমণ্ডলের উপাদান গঠন সম্পর্কে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি উল্লেখ করেছেনযথা-

উপাদানের নাম

ওজন গত অনুপাত

 নাইট্রোজেন (N2)  

78.08 %

অক্সিজেন (O2)

20.94 %

কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)

0.033 %

জলীয়বাষ্প এবং  আরগনক্রিপটন, জেনন

 মিথেন, নিয়ন ইত্যাদি গ্যাস  

0.9337 %


বায়ুমণ্ডলের উৎপত্তি সম্পর্কে সংক্ষেপে উল্লেখ কর

 সৃষ্টি  লগ্নে পৃথিবী ছিল  একটি জ্বলন্ত গ্যাসীয় পিণ্ড.  কোটি কোটি বছর ধরে তাপ বিকিরণের ফলে ওই গ্যাসীয় পিন্ডের কিছু অংশ জমাট বেঁধে গঠন করে শিলামন্ডল.  পরবর্তীকালে আরো কিছু অংশ অবস্থা প্রাপ্ত হয়ে  সৃষ্টি করে বারিমন্ডল।  যে সকল উপাদান যাদের হিমাঙ্ক পৃথিবীর বর্তমান উষ্ণতা তুলনায় বহু গুণ কমতারা কঠিন বা  তরল কোন অবস্থাতেই উপনীত হতে না পেরে  মাধ্যাকর্ষণ  শক্তির প্রভাবে একটি অদৃশ্য গ্যাসীয় পরিমণ্ডল বা বায়ুমণ্ডল সৃষ্টি করে।

 

বায়ুমণ্ডলের উল্লেখযোগ্য উপাদান গুলি সংক্ষেপে পরিচয় দাও।

 বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন  প্রকার উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। তবে এদের কতকগুলি উপাদান পৃথিবীর উপর সুদুরপ্রসারি প্রভাব ফেলেছে।  যথা-

 নাইট্রোজেন (N2)

 বায়ুমণ্ডলের ওজন  গত অনুপাতের  78 শতাংশ নাইট্রোজেন গ্যাস অধিকার করে রয়েছে।  আক্ষরিক অর্থে ইহা নিষ্ক্রিয় গ্যাস হলেও এর প্রভাব সুদুর প্রসারি।  কারণ-

 ১)  কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া  এবং শুটি  জাতীয় উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন গ্রহণ করে পুষ্টি লাভ করে প্রাণী জগৎ পুরোপুরি নির্ভরশীল।

২)   জীবের  প্রোটিন জাতীয়  খাদ্য প্রস্তুতে  নাইট্রোজেন গ্যাস অপরিহার্য।

৩)  বর্তমানে প্রত্যক্ষভাবে নাইট্রোজেন গ্যাস সংগ্রহ করে ইউরিয়ার ন্যায়  নাইট্রোজেন জাতীয় সার  প্রস্তুত করা হয়।

নাইট্রোজেন (N2)

 

অক্সিজেন (O2)

ওজন  গত আয়তনের বিচারে অক্সিজেন গ্যাসের স্থানীয় প্রায় ২০.৯ শতাংশ।  অক্সিজেন গ্যাসের প্রভাব শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয় জীবজগতের কাছে সুদুরপ্রসারি কারণ-

 ১) শ্বাস-প্রশ্বাসে অক্সিজেন গ্যাস অপরিহার্য।

২)  যে কোন প্রকার দহন কাজ অক্সিজেন ছাড়া সম্ভব নয়।

৩)  অক্সিজেন অক্সিডেশন ঘটিয়ে  মৃত্তিকা গঠনে সাহায্য করে।

 

অক্সিজেন (O2)

কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)

বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ অতি সামান্যমাত্র ০.০৩৩ শতাংশ । পরিমাণ অতি সামান্য হলেও এর প্রভাব সুদুরপ্রসারিকারণ-

 ১)  উদ্ভিদের খাদ্য প্রস্তুতে  বা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইডের ভূমিকা অপরিহার্য।

২)  অঙ্গার জাতীয় খনিজ গঠনে কার্বন ডাই অক্সাইডের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

৩)  সৌরতাপ  শোষণ  ও বন্টনে  কার্বন ডাই অক্সাইডের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)

ওজোন (O3)
বায়ুমন্ডলে ওজোন গ্যাসের পরিমাণ অতি সামান্য প্রায় 0.00006 শতাংশ।  ইহা বায়ুমণ্ডলের 25 থেকে 45 কিমি উচ্চতায় একটি স্তরওজনোস্ফিয়ার রূপে অবস্থান করে।  ওজোন গ্যাসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  কারণ সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মি  এই গ্যাস দ্বারা শোষিত হয়।  অর্থাৎ ওজোন স্তর  একটি  ছাকনীর  ন্যায় কাজ করে যা পৃথিবী পৃষ্ঠে উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলেছে। 

 

Ozone Gas

জলীয় বাষ্প (H2O)

বায়ুমণ্ডলের জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অতি নগণ্য এবং ইহা বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরে  ট্রপোস্ফিয়ারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।  জলীয় বাষ্পের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণকারণ জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘকুয়াশাবৃষ্টিতুষারতুহিন  প্রভৃতি সৃষ্টি করে।  সৌরতাপ শোষণ ও বণ্টনে জলীয় বাষ্পের সুদুরপ্রসারি প্রভাব রয়েছে।

 

জলীয় বাষ্প (H2O)

ধূলিকণা ও বিজাতীয় পদার্থ

বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরে অতি সামান্য পরিমাণে নগণ্য পরিমাণে কার্বনকণাধাতবকণা ও অন্যান্য বিজাতীয় পদার্থ রয়েছে।  এই উপাদান গুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এদের আশ্রয় করে বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ঘনীভবনের সুযোগ লাভ করে।  যার অনিবার্য  ফলশ্রুতি হল মেঘবৃষ্টি, কুয়াশা, তুহিনতুষার ইত্যাদি।



Share:

No comments:

Post a Comment

Popular Posts

Blog Archive

Recent Posts

Total Pageviews