ভারতের মৃত্তিকা
● মৃত্তিকা কাকে বলে ?
ভু-ত্বকের ওপরের স্তরে অবস্থিত এবং সূক্ষ্ম শিলাখ্ন্ড দিয়ে গঠিত
নরম ও শিথিল স্তরভাগকে মৃত্তিকা বা মাটি বলে ।
● মৃত্তিকার প্রকৃতি কিসের উপর নির্ভর করে ?
জলবায়ু, উদ্ভিদ ও শিলাস্তরের প্রকৃতির ওপর মাটির গঠন নির্ভর করে ।
● ভারতের আয়তনের কত শতাংশ অঞ্চলে পলি মাটি দেখা যায় ?
প্রায় ৪৫.৬% অঞ্চলে পলি মাটি দেখা যায় ।
● খাদার কাকে বলে ?
গঙ্গা নদীর তীরবর্তী নবীন পলিমাটিকে খাদার বলে ।
● ভাঙ্গর কাকে বলে ?
গঙ্গা নদীর প্রবাহপথের উচ্চ অংশের প্রাচীন পলিমাটিকে ভাঙ্গর
বলে ।
● কংকর কাকে বলে ?
ভাঙ্গর মাটিতে চুনজাতীয় পদার্থের আধিক্য বেশি থাকলে, এই মাটিকে কংকর বা
ঘুটিং বলে ।
● খাদার মাটিকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ?
গঠন অনুসারে খাদার মাটি বেলে, এঁটেল ও দোঁয়াশ - এই তিন ভাগে বিভক্ত ।
● ভারতের কোথায় কোথায় পলি মাটি পাওয়া যায় ?
শতদ্রু - গঙ্গা - ব্রম্মপুত্র সমভূমি, মহানদী - গোদাবরী -
কৃষ্ণা - কাবেরী নদীর উপত্যকা ও ব-দ্বীপ এবং উপকূলবর্তী অঞ্চলে পলি মাটি দেখা যায় ।
● ভারতের আয়তনের কত শতাংশ অঞ্চলে কালোমাটি বা কৃষ্ণমৃত্তিকা
দেখা যায় ?
ভারতবর্ষের মোট ১৬.৬% অঞ্চলে কালোমাটি বা কৃষ্ণমৃত্তিকা দেখা যায় ।
● কোন শিলা থেকে কালোমাটি বা কৃষ্ণমৃত্তিকা সৃষ্টি হয়েছে ?
লাভা গঠিত ব্যাসল্ট শিলা থাকে এই মাটির সৃষ্টি হয়েছে ।
● কৃষ্ণমৃত্তিকা এর অপর নাম কি ?
রেগুর ।
● তেলেগু শব্দ রেগাডা কথার অর্থ কি ?
কালো মাটি ।
● কৃষ্ণমৃত্তিকায় কিসের চাষ ভালো হয় ?
কার্পাস বা তুলা ।
● কৃষ্ণমৃত্তিকা কে কালো তুলা মাটি বলে কেন ?
প্রচুর পরিমানে তুলো উৎপন্ন হয় বলে একে কালো তুলা মাটি বা কৃষ্ণ কার্পাস মৃত্তিকা বলে ।
● কৃষ্ণমৃত্তিকার জলধারন ক্ষমতা কেমন ?
এর জল ধারণ ক্ষমতা খুব বেশি ।
● ভারতের কোথায় কোথায় লালমাটি বা লোহিত মৃত্তিকা পাওয়া যায় ?
সমগ্র তামিলনাড়ু , কর্ণাটকের অংশবিশেষ , মহারাষ্টের দক্ষিণ
-পূর্ব ,অন্ধ্র ও মধ্যপ্রদেশের পূর্বাংশ , ছোটনাগপুর অঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গের
বাঁকুড়া ও বীরভূম জেলা ।
● লোহিত মৃত্তিকার জলধারন ক্ষমতা কেমন ?
জলধারণ ক্ষমতা খুব কম
● লোহিত মৃত্তিকার উর্বরতা কেমন ?
উচ্চ অঞ্চলে লাল মাটি অনুর্বর ও নিন্ম অঞ্চলে উর্বর প্রকৃতির হয়
● ভারতের কত শতাংশ অঞ্চলে লোহিত মৃত্তিকা দেখা যায় ?
ভারতের আয়তনের ১০.৬% অঞ্চলে।
● ভারতের কোথায় কোথায় ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা পাওয়া যায় ?
ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা পশ্চিমঘাট পর্বতের শীর্ষদেশে, পূর্বঘাট, রাজমহল পাহাড়, অসম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি অঞ্চল দেখা যায় ।
● ল্যাটিন শব্দ 'ল্যাটার' কথার অর্থ কি ?
ল্যাটিন শব্দ 'ল্যাটার' অর্থাৎ ইট থেকে ল্যাটেরাইট ।
● ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা বৈশিষ্ট্য লেখ ?
ইটের মতো শক্ত ও লাল রঙের । অধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে অধিক ধৌত প্রক্রিয়ার
ফলে মাটির উপরের স্তরের সিলিকা নিচের স্তরে চলে যায় ফলে উপরের স্তরে লোহা ও
আলমুনিয়ামের পরিমান বৃদ্ধি পায় । এই মাটির জলধারণ ক্ষমতা খুব কম ।
● ভারতের কত শতাংশ অঞ্চলে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা দেখা যায় ?
মোট মৃত্তিকার ৭.৫% হল ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা।
● ভারতের কোথায় কোথায় পার্বত্য মৃত্তিকা পাওয়া যায় ?
পূর্ব হিমালয় ও পশ্চিম হিমালয়ের উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে , পশ্চিমঘাট ও
নীলিগিরির উঁচু অংশে উদ্ভিদের পাতা পচে এই মাটি সৃষ্টি হয় ।
● পার্বত্য মৃত্তিকা কে কি কি ভাগে ভাগ করা যায় ?
পডসল, ধূসর বাদামী
মৃত্তিকা, কারেওয়া, তালুন, কাটিল ইত্যাদি।
● কারেওয়া কি?
কাশ্মীরের পার্বত্য
মাটি।
● কাটিল কি ?
হিমাচল প্রদেশের পাথুরে পার্বত্য মাটি।
● আপরুন কি ?
কাঁকর মিশ্রিত বেলে পার্বত্য মাটি।
● তালুন কি ?
কাদা যুক্ত দো-আঁশ ধর্মী পার্বত্য মাটি।
● পডসল মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য লেখ ?
পশ্চিম হিমালয় নীলিগিরির উঁচু অংশে সরলবর্গীয় বনভূমির পাতা,
কান্ড,
ফল প্রভৃতির
মিশ্রনে যে মাটি সৃষ্টি হয় তাকে পডসল মৃত্তিকা বলে । এই মাটি অম্ল প্রকৃতির ।
● ধূসর বাদামি অরণ্য মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য লেখ ?
পূর্ব হিমালয়ের উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে ওক , লরেল , চেস্টনাট প্রভৃতি গাছের পাতা পচে এক ধরণের
মাটি সৃষ্টি হয়, এই মাটির অম্লত্বের পরিমান কম, এই মাটি কে ধূসর বাদামি অরণ্য মাটি বলে।
● ভারতের কোথায় কোথায় মরু মৃত্তিকা দেখতে পাওয়া যায় ?
রাজস্থানের বাগার
ও মরুভূমি, সংলগ্ন পাঞ্জাব হরিয়ানা এবং কচ্ছের রণ অঞ্চলে।
● মরু মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য লেখ ?
এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান খুব কম,
তাই বেশি বাষ্পীভবন ফলে মাটির উপরিভাগে লবণের পরিমান বেশী
থাকে । এই মাটির জল ধারণ ক্ষমতা খুব কম হয় ।
● সিরোজোম কি ?
মরু মৃত্তিকা বা বালুকাময় মাটিকে সিরোজেম বলে ।
● লবণাক্ত ও ক্ষারকীয় মৃত্তিকা কোথায় দেখা যায় ?
বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও রাজস্থানের শুল্ক অঞ্চলে ও সমুদ্র
উপকূলবর্তী অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায় ।
● লবণাক্ত ও ক্ষারকীয় মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য লেখ ?
এই মৃত্তিকায় জল
থাকলেও উদ্ভিদ তা শোষণ করতে পারে না।
● লবণাক্ত ও ক্ষারকীয় মৃত্তিকার স্থানীয় নাম গুলি লেখ ?
এই মৃত্তিকা স্থানীয় ভাষায় নানা নাম পরিচিত ।
এগুলো হলো - রে ,
থুর , কালার ঊষর ,
রাকার, চোপান ইত্যাদি ।
● ভারতের কোথায় কোথায় উপকূলীয় ব-দ্বীপ অঞ্চলের মৃত্তিকা দেখা
যায় ?
ভারতের পূর্ব উপকূলের গঙ্গা, মহানদী, গোদাবরী,
কৃষ্ণা ও কাবেরী নদীর ব-দ্বীপ অঞ্চলে ও
ভারতের পশ্চিম উপকূলের কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ ও রণ অঞ্চলে এই মাটি দেখা যায় ।
● উপকূলীয় ব-দ্বীপ অঞ্চলের মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য লেখ ?
বেশিরভাগ সময়ে এই অঞ্চলের মাটি সমুদ্রের জলে
ডুবে থাকে । এই মাদী লবনাক্ত ও কর্দমাক্ত । এই মাটি কৃষি কাজের জন্য উপযোগী নয় ।
● জলাভূমি
অঞ্চলে মৃত্তিকা কোথায় কোথায় দেখতে পাওয়া যায় ?
এই মাটি কেরালার উপকূল,
পশ্চিমবঙ্গের
উপকূল,
ওডিশা উপকূল ও
তামিলনাড়ু উপকূলে দেখা যায় ।
● জলাভূমি
অঞ্চলে মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য লেখ ?
এই মাটি ভারী ও কাঁদা যুক্ত । কালোবর্ণের এই
মাটি উচ্চমাত্রায় অম্লিক ।
No comments:
Post a Comment