তিনবিঘা করিডর ভারত বাংলাদেশ মৈত্রীর এক অধ্যায়

কিন্ডার গার্টেন লেভেলে পড়াশুনার চাপ নেই কিন্তু ছোটবেলায় প্রাতিদিন সকাল সকাল উঠে স্নান খাওয়া দাওয়া করে স্কুলে যাওয়া ভাল লাগতনা আমার। সেই তুলনায় পালাকরে ঠাকুমা ও দিদার কাছে শুয়ে শুয়ে গল্প শুনতে ভাল লাগত। প্রায় পচিশ বছর আগের সাল তারিখ ঠিক মনেনেই, তবে এই সময় একদিন যেন হাতে চাদ পেয়ে গেলাম! প্রতিদিন সকালে উঠতাম আর শুনতাম আজ হরতাল তাই স্কুল হবে না, কালও বন্ধ, তার পরদিনও ধর্মঘট! দুএকদিন নয় একটানা অনেকদিন। আজ ভারত বন্ধ, কাল বাংলা বন্ধ, পরশু জেলায় সাধারন ধর্মঘট। রাজনৈতিক ডামাডোলের কারন কি তখন না বুঝতে পারলেও সবার মুখে একটাই নাম শুনতাম, তিনবিঘা কড়িডর। বাংলাদেশকে কড়িডরের জায়গা দেওয়া হবে কিনা ?

পরবর্তী দীর্ঘ আড়াই দশকে তিনবিঘা করিডর বারে বারে ঘুরে ফিরে খবরের শিরোনামে  এলেও কোচবিহার জেলার প্রান্তিক মহকুমার প্রত্যন্ত এই সীমান্তবর্তী এলাকায় যাওয়ার সুজোগ আগে আসেনি। এমনিতে সীমান্ত এলাকা বলতে মনের কোনে উকি দেয় চোরাচালান, গরুপাচার, পুলিশ ও বিএসএফ এর কড়াকড়ি। তাই যত দূরে থাকা যায় তত ভালো। কিন্তু একই জায়গা দিয়ে দুই দেশের মানুষ পারাপার করছে কিভাবে তা নিজে চাক্ষুস করার ইচ্ছে ছিল বহুদিনের। সুযোগ এল চিরঞ্জিবদার ভাই প্রদীপদার অফিসের কাজে মেখলীগঞ্জ আসাতে। প্রদীপদা থাকে কোলকাতায়, অনেকদিন দুজনের দেখা হয়না, তাই চিরঞ্জিব দা যাবে দেখা করতে। সাথে নিয়ে গেল আমাকেও।

অতপর গন্তব্য তিনবিঘা করিডর ভায়া মেখলীগঞ্জ। আমাদের যেতে হবে প্রায় ১৫০ কিমি উত্তর পশ্চিমে । তাই স্কুল থেকে সরাসরি বেড়িয়ে পড়লাম ।  যাত্রী বলতে ড্রাইভার দীপংকর ছাড়া আমি আর চিরঞ্জিব দা । দীর্ঘ ৩৪ বছরের অবহেলার পর বর্তমানে উত্তরের অকুলীন প্রান্তিক জেলাগুলিতে জাতীয় ও রাজ্য সড়কের কাজ পুরোদমে চলছে তাই ডাইভারসন, খানা-খন্দ, জ্যাম প্রভৃতি পেরিয়ে কোচবিহার থেকে মাথাভাঙ্গা পৌছতে সন্ধ্যা নেমে এল । এখনো প্রায় দ্বিগুণ পথ বাকী ! এদিকের রাস্তায় গাড়ির ভির নেই ঠিকই, তবে রাস্তার পিচেরও অবশিষ্ট নেই, সুতরাং গতি ১০-১৫, আমরাও কাহিল । জামালদা পার হয়ে আমরা উঠলাম চাংরাবান্ধ্যা হাইওয়েতে । এবারে যেন হাফ ছেড়ে বাচাগেল । জন্মসূত্রে কোচবিহার জেলার হলেও এদিকটায় আমার কোনদিন আসা হয়নি । পড়ন্ত বিকেলের আলোআঁধারি বাঁশঝাড় আর দূরে ধানক্ষেতের ওপারে বাড়িগুলিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে টিমটিম করে জ্বলা আলো । রাস্তায় লোকজনের তেমন দেখা নেই ! তাই সম্বল বলতে হাতের তালুতে বন্দী  TAB ও গুগল ম্যাপের GPS । চারিদিকে এখন ভালো অন্ধকার । রাস্তা ছাড়া প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছেনা । সামনের বাঁক পেরতেই আমাদের পাশাপাশি চলতে শুরু করল কাঁটাতারের বেড়া । কিছুদূর পরপর হ্যলোজেনের হাইমাস্ট । অর্থাৎ ওপারেই বাংলাদেশ । রাস্তার এতো পাশে কাঁটাতার এই প্রথম দেখলাম । সে এক চরম উত্তেজনা, আবার একটু উতকন্ঠাও বটে ! ভুল রাস্তায় চলছি নাতো ? কাঁটাতারের ওপারে বাংলাদেশের বাড়ি ঘর বাজার রাস্তার আলো প্রায় সবই স্পষ্ট দেখাযাচ্ছে । রাস্তার পরপর হাম্পে ( Bump ) গাড়ি দুলে উঠতেই TAB এ চোখ পড়ল লেভেল ক্রসিং, রেললাইন পেড়তে পেড়তে জানালা দিয়ে মুখ বাড়াতেই বাঁপাশে চোখে পড়ল নিউ চ্যাংরাবান্ধ্যা ষ্টেশন । এবার আমরা চলেছি মেখলীগঞ্জের দিকে । সন্ধ্যা সাতটা । কিন্তু মনে হচ্ছে অনেক রাত । প্রায় অনেক দিন পর দুই ভাইয়ের দেখা, স্বভাব সুলভ হাসি ঠাট্টা ও কথোপকথনের মাঝে চিরঞ্জিবদা পরিচয় করিয়ে দিল আমাকে প্রদীপদার সাথে।  ক্ষণিকের সাক্ষাতেই যেন আপন হয়ে গেলাম। গরম গরম চা দিয়ে সন্ধ্যার টিফিনের পর আমরা এগোলাম পরবর্তী গন্তব্যের দিকে। নিজের জন্য বরাদ্ধ সরকারী গাড়ী ছেড়ে প্রদীপদা উঠেছে আমাদের সাথে। 

এবার আমরা চলেছি তিনবিঘা করিডর এরদিকে । পিচের সরুরাস্তা  একেবেকে চলেছে । খানিক এগনোর পর বাঁপাশে প্রথম BSF outpost দেখা গেল । এরপর আমরা যত এগচ্ছি প্রায় প্রতি দশ-পনেড় হাত দূরে এক-দুজন BSF জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে আসছে , দূর থেকে পরখ করে দেখছে, হাত নেড়ে এগিয়ে যেতে ইশারা করছে । প্রত্যেকের বাহাতে টর্চ ডানহাতে লাঠি আর ঘারে AK-47 । একে সামনে সরকারী গাড়ি , পিছনের গাড়ীতে আমরা, তাই চাপ কম ! নাহলে কারক বিভক্তির প্রথম পাঠের উত্তর দিয়ে বিদায় নিতে হতো । BSF এর নজরদারী বেশী,সেই কারনেই রাতে মানুষের চলাচল হয়ত কম।

রাতের সীমান্ত পাহারায় সতন্ত্র প্রহরী



রাতে তেমন দেখার নেই । তার উপর বিধি নিষেধের কড়াকড়ি। তাই চিরঞ্জিব দার কাছে আগামী কাল সকালে আবার আসার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরে গেলাম । আমরা উঠেছি তিনবিঘা টি রিসোর্ট হোটেল সিলভার ক্লাঊডে । গরম গরম তাওয়া রুটি ও দেশী মুরগীর কসা, সাথে স্যালাড এক কথায় অনবদ্য।

প্রদীপদা, চিরঞ্জিবদা ও আমি বাদিক থেকে


এখন রাত প্রায় বারোটা । চোখ আর মানছেনা ! তাই গেলেম আমার জন্য বরাদ্ধ ঘরে । রিসোর্ট বলে কথা ! ঘরে কি আছে আর কি নেই ? সারা দেওয়াল জুরে পর্দা । একপাশে কাঁচের দরজা ও বেলকনি । অন্যপাশে পুরটাই উইন্ডো । অন্ধ্যকার তাই দেখা যাচ্ছেনা কিন্তু জলের আওয়াজে বুঝতে পারছি পাশেই কোন নাম না জানা ছোটনদী বয়ে চলেছ । শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরেসামনের কাঁচের দেওয়ালের পর্দা সরিয়ে মখমলের বিছানা থেকে চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুম যাওয়ার বর্ণনা করার কব্জির মানে কলমের জোর আমার নেই । পাখির কলরবে ঘুম ভাঙল অনেক দিন পর । বাইরে হালকা কুয়াশা । সকালে সূর্যের প্রথম কিরণ চোখে পড়তেই বিছানায় উঠে বসলাম । বুঝতে পারছিনা কথায় এসেছি ? একি তিনবিঘা নাকি ডুয়ার্স কিংবা অন্যকোন রিসোর্ট ! চারিদিকে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ চাবাগান, মাঝে ছোট তবে নিরবিচ্ছিন্ন জলধারার সেই স্রোতস্বিনী । বলতে বাধা নেই এই নৈস্বর্গিক শুপ্রভাতের জন্য আবারো আমি শতশত কিমি কোমর ভাঙ্গা জার্নি করতে পারি ! অ্যাটাচ ওয়াশরুম তাই তাড়া নেই । ১০ মিনিটেই রেডি হয়ে নিচে নেমে এলাম।





রাতে রিসোর্টের বাইরেটা দেখা হয়নি । আজ ভালোকরে বাইরেটা দেখলাম। এক সময় এই রিসর্ট যে রমরমিয়ে চলত তা এর বহর দেখলেই মালুম হয়। তবে ভূইফোড় মানিমার্কেটিং কোম্পানি গুলি লাটে ওঠায় এখানকার জৌলসে যে ভাটা পরেছে তা সহজেই অনুমেয়। চারিদিকে আগাছায় ভর্তি। অযত্নের ছাপ দেখে ছোটবেলায় দেখা দা লস্ট ওয়ার্ল্ড ছবিতে দেখানো পুরনো জুরাসিক পার্কের কথা মনে পরে। প্রদীপদা এখনো রেডি হচ্ছে তাই আমরা ফেসবুকের জন্য কিছু পোজ দিলাম! 
সবুজের মাঝে চিরসবুজ চিরঞ্জিবদা















সখের পর্যটক
এখান থেকে অল্পদূরে করিডর তাই দীপঙ্করকে আর ডাকলাম না । চিরঞ্জিবদা ও প্রদীপদা সামনের আসনে । আমি পিছনে বসেছি । ১০ মিনিটের মধ্যে করিডোরে পৌছেগেলাম । তিন বিঘা করিডোর হল একটি সতন্ত্রভূমি যা ভারতের মালীকাধীন তিনবিঘা জায়গার মধ্যে অবস্থিত । এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেঘলীগঞ্জ মহকুমা ও বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত । ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলে যাতায়াতের সুবিধার্থে এটি বাংলাদেশকে ইজারার মাধ্যমে দেওয়া হয় ।
Tinbigha Corridor Map HD


সমস্ত জায়গাটি দেখতে অনেকটা আয়তকার পার্কের মতো । দুটি যোগাযোগ কারী পিচেররাস্তা পরস্পরকে লম্বভাবে ছেদ করেছে অনেকটা প্লাস চিহ্নের মতো । মাঝে একটি চৌমাথা যেখানে দুজন সিভিক পুলিশ চলাচল নিয়ন্ত্রন করছে । আমরা ভারতীয়রা চারটি রাস্তাতেই হাটতে পারি, দাঁড়াতে পারি, ছবি তুলতে পারি, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ শুধু নিজেদের করিডর দিয়েই জাতায়াত করতে পারে , দাঁড়াতে পারেনা ! সকাল বেলায় আমাদের সামনা দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ জন কাজের জন্য পারাপার করছে । তিনটে বাংলাদেশের ট্রাক্টর পাটগ্রাম থেকে দহগ্রাম প্রবেশ করল । পার্কে বসে ছবি তুললাম কিছু । পার্কটী তেমন আহামরি সুন্দর না হলেও জায়গাটির ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব কম নয় । 
Tinbigha Corridor


তিনবিঘা করিডোরের মাঝে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলে যাতায়াতের রাস্তা । তিনবিঘা করিডোরের চারপাশে কাটাঁতারের বেড়া  । ১৯৭৪ এর ১৬ই মে  ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমান চুক্তি অনুসারে ভারত ও বাংলাদেশ তিনবিঘা করিডোর ( ১৭৮ বাই ৮৫ মিটার ( ৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু )) ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর  ( ৭.৩৯বর্গ কিলোমিটার  ( ২.৮৫ বর্গ মাইল )) সার্বভৌমত্ব পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করে । এর ফলে উভয় দেশেই তাদের ছিট মহলে যথাক্রমে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর যাতায়াত সুবিধা তৈরি হয় । ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ চুক্তি অনুসারে সাথে সাথেই দক্ষিণ বেরুবাড়ী ভারতের কাছে হস্তান্তর করে যদিও ভারত তিনবিঘা করিডোর বাংলাদেশের কাছে রাজনৈতিক কারনে হস্তান্তর করেনি । এটি হস্তান্তরে ভারতের সাংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছিল ।  পরবর্তিতে বাংলাদেশ সরকারের অনেক বিরোধিতার পর ২০১১ সালে ভারত পূর্ণভাবে এটি বাংলাদেশকে দেওয়ার বদলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ইজারা হিসাবে দিয়েছিল এই শর্তে যে একই সময়ে দক্ষিণ বেরুবাড়ি ভারতের নিয়ন্ত্রানেই থাকবে । ১২ নং দক্ষিণ বেরুবাড়ী ইউনিয়নের মোট আয়তন ২২.৫৮ বর্গকিলোমিটার ( ৮.৭২বর্গমাইল ), যার ১১.২৯ বর্গকিলোমিটার  ( ৪.৩৬বর্গমাইল ) বাংলাদেশ পেয়েছিল । এছাড়াও পূর্বের ভাগ অনুসারে কোচবিহারের চার টিছিটমহল বাংলাদেশে পড়েছিল যার আয়তন ৬.৮৪ বর্গকিলোমিটার ( ২.৬৪বর্গমাইল ), এভাবে মোট আয়তন ১৮.১৩ বর্গকিলোমিটার  ( ৭.০০বর্গমাইল )  যা বাংলাদেশে স্থানান্তর হওয়ার কথাছিল । ১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী এই ভূখন্ড গুলোর মোট জনসংখ্যার ৯০ %ই ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী । পক্ষান্তরে বাংলাদেশের ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ভারতে হস্তান্তরের কথাছিল । যার মোট আয়তন ১৮.৬৮ বর্গকিলোমিটার ( ৭.২১বর্গমাইল ) ও ১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৮০% ছিল মুসলমান । যদি এই হস্তান্তর সফল হতো তাহলে এটি জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকত । ফলে তখন বেরুবাড়ীর জনগণ এই হস্তান্তরের বিরোধিতা করেছিল । ১৯৭১ এরপর ভারত বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয় বেরুবাড়ীর অর্ধাংশ ভারতের অধীন থাকবে এবং দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাংলাদেশেই থাকবে । এই চুক্তি অনুসারে ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাসীর বাংলাদেশের মূলভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটি তিনবিঘা আয়তনের জায়গা ইজারা হিসেবে দিয়েছিল । এটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল এবং তিনবিঘার চার পাশে সতর্কতার সাথে বেষ্ঠ্যনী দেওয়া হয়ে  । ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত ১.১৪ ধারা অনুসারে বেরুবাড়ী বিরোধের অবসান ঘটে ।  
শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবর রহমান

চুক্তি অনুসারেঃ “ভারত দক্ষিণ বেরুবাড়ীর দক্ষিনাংশের অর্ধেক নিয়ন্ত্রন করবে যার আনুমানিক আয়তন ৬.৮ বর্গকিলোমিটার ( ২.৬৪বর্গমাইল ) এবং বিনিময়ে বাংলাদেশ দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা নিয়ন্ত্রন করবে । ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাসীদের বাংলাদেশের মূলভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৭৮ বাই ৮৫ মিটার  ( ৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু ) আয়তনের একটি ভূমি বাংলাদেশকে ইজারা হিসেবে দিবে ।” বাংলা আয়তন পরিমাপের একটি একক বিঘা থেকে তিনবিঘা নামের উৎপত্তি, ভূমিটির মোট আয়তন ১,৫০০  থেকে ৬,৭৭১ বর্গ মিটার  ( ১৬,১৫০ থেকে৭২,৮৮০বর্গফুট  ) যা তিন বিঘা পরিমাপের সমান । পূর্বে  করিডোর টি দিনের  ১২ ঘন্টা সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হত, এতে দহগ্রাম আঙ্গরপোতার অধিবাসীদের কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হত কারন সে সময় সেখানে কোন হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  ছিলনা  । ২০১১ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার একটি চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে করিডোরটি ২৪ ঘন্টাই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে । ২০১১ সালের  ১৯ শে অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা কর্তৃক আনুষ্ঠানিক ভাবে করিডোরটি উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয় ।
                     সূত্র: https://bn.m.wikipedia.org/wiki/তিনবিঘা_করিডোর

পাশেই একটি চায়ের দোকান সদ্য খুলছে । খুচরো নেই তাই ইচ্ছে থাকলেও কপালে জুটলনা । এবার প্রদীপদার ইচ্ছে হল গাড়ী চালানোর হাতটিকে আরেকটু পাকিয়ে নিতে । এমনিতে ফাঁকা রাস্তা, চাপ নেই ! তাই আমরাও হেলেদুলে ধীরে সুস্তে রিসোর্টে ফিরে এলাম । আজই আমাদের ফিরে স্কুল ধরতে হবে তাই ইচ্ছে থাকলেও চলেযেতে হচ্ছে ।
এবার বিদায় তবে


ফেরার পথে এক ঝলক দেখে নিলাম Land Port Authority of India এর নির্মীয়মাণ চ্যাংরাবান্ধ্যা স্থলবন্দর ও নিউ চ্যাংরাবান্ধ্যা ষ্টেশন । এখন এই চ্যাংরাবান্ধ্যা বুড়িবাড়ি সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে সড়ক পথে শিলিগুরি ঢাকাগামী ভূতল পরিবহনের বাস পরিসেবা রয়েছে । এছাড়া রয়েছে দুই দেশের পণ্য পরিবহন । পথের পাশেই চোখে পড়ল বিশাল ট্রাক টারমিনাস । কে বলতে পারে আগামীতে এখান দিয়েই চলতে শুরু করবে সেই সোনালী অতীতের কোলকাতা কোচবিহার ভায়া রংপুর দূরপাল্লার ট্রেন ।
নিউ চ্যাংরাবান্দা স্টেশন




ফিরে এসেছি নিজের কর্মক্ষেত্রে।  তবুও মনের কোণে গেথে আছে সেই চাবাগান ঘেরা বাংলোর কথা। তাই ক্লাস ফাইভের স্টপগ্যাপে বাচ্চাদের ছবি আকার থিম যদি সেই টি রিসোর্ট হয়, ক্ষতি কি ?

স্মৃতি যেন জোনাকী.......!!

July 04, 2016. Cooch Behar



Share:

Topographical Map 45 D/7 Explanation for Class 12 টোপোম্যাপ ৪৫ ডি/৭ বিস্তারিত আলোচনা দ্বাদশ শ্রেণী ভূগোল

প্রদত্ত ভূসংস্থানিক মানচিত্রটির নম্বর 45 D/7 যা ভারতের গুজরাট রাজ্যের বানসকাথা জেলা এবং রাজস্থান রাজ্যের সিরোহি জেলার অংশবিশেষ। প্রতিনিধিত্বমূলক স্কেল 1:50000 অনুসারে মানচিত্রটির মোট ভৌগোলিক আয়তন আনুমানিক ৭২০ বর্গ কিমি এবং অঞ্চলটি ২৪ ডিগ্রি ১৫ মিনিট উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৪ ডিগ্রী ৩০ মিনিট উত্তর অক্ষরেখা এবং ৭২ ডিগ্রী ১৫ মিনিট পূর্ব দেশান্তর থেকে ৭২ ডিগ্রি ৩০ মিনিট পূর্ব দেশান্তর রেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটি একটি ১৫ মিনিট X ১৫ মিনিট কোয়াডেন্ট্রাল শীট যা ভারতীয় সর্বেক্ষণ বিভাগ কর্তৃক ১৯৫৮-৬০ সালে প্রথমবারের জন্য জরীপ করা হয় এবং ২০০৫ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংযোগ করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল গিরিশ কুমারের তত্ত্বাবধানে ২০১৯ সালে প্রথম সংস্করণ হিসাবে মানচিত্রটি প্রকাশ করা হয়। মানচিত্রটির চুম্বকীয় বিচ্যুতি ২০১৫ সালে প্রকৃত উত্তর থেকে ১/২ ডিগ্রী ছিল যা প্রতিবছর পূর্ব দিকে ৩ সেকেন্ড করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানচিত্রটিতে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ এর বিবরণ কুড়ি মিটার ব্যবধানের সমোন্নতি রেখার দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে। 
টোপোম্যাপ ৪৫ ডি/৭ ভূপ্রকৃতি
ভূ-প্রাকৃতি (PHYSIOGRAPHY)

প্রদত্ত ভূ-সংস্থানিক মানচিত্রে নির্দেশিত অঞ্চলটি দুটি স্বতন্ত্র ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগে বিভক্ত। মানচিত্রের পূর্বে অবস্থিত মালভূমি অঞ্চলটির উচ্চতা ৩০০ মিটার থেকে প্রায় ৯০০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখানকার উচ্চতম স্থান যশর হিল যার উচ্চতা প্রায় ১০০০ মিটারের কাছাকাছি। অন্যদিকে মানচিত্রের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ক্ষয়জাত সমভূমি, যার স্থানে স্থানে উন্মুক্ত পাথরের টিলা দেখা যায়। বৈচিত্রহীন এই সমভূমি অঞ্চলের  উচ্চতা ১০০ থেকে ২৬০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। পশ্চিম থেকে পূর্বে অর্থাৎ মালভূমির দিকে অঞ্চলটির গড় ঢাল ক্রমে বৃদ্ধি পেয়েছে।

টোপোম্যাপ ৪৫ ডি/৭ ভূমিরূপ বিস্তারিত আলোচনা

জলনির্গমন ব্যবস্থা (Drainage System)

মানচিত্রটির প্রায় মাঝ বরাবর পূর্বদিক থেকে পশ্চিমদিকে বানস নদী বয়ে চলেছে। বানস নদীর প্রধান উপনদী হল বলরাম নদী যা খাজা নামক স্থানে মূল নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। শুষ্কমরু অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীখাতের মাঝে মাঝে চড়া ও দ্বীপ দেখা যায়। দান্তেওয়ারা নামক স্থানে নদীবাঁধ দেওয়ায় একটি জলাধারের সৃষ্টি হয়েছে। খালের মাধ্যমে এই নদীর জল সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়। মরুভূমির আলগা শিথিল মাটির উপর দিয়ে নদীগুলি প্রবাহিত হওয়ায় নদী খাতের দুই তীরে স্থানে স্থানে খোয়াই ও নালি ক্ষয় দেখতে পাওয়া যায়। বানস নদীর ডান তীরের উপনদী গুলির মধ্যে আরাডো নদী, শারদ নদী এবং বাম তীরের উপনদী গুলির মধ্যে বলরাম নদী উল্লেখযোগ্য। অপরদিকে আরাবল্লী পর্বতের ব্যাবচ্ছিন্ন মালভূমির অংশ থেকে উৎপন্ন হয়ে ধলবা নদী দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে দাড়ি নামক স্থানে হারকা নদী নাম গ্রহণ করে পুনরায় পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে রামপুরা নামক স্থানে সিপু নদীতে মিশেছে। হারকা নদীর এ উপনদী হল হানভা নালা। সিপু নদী এই অঞ্চলের আরেকটি প্রধান নদী। গনেশপুরা নামক স্থানে সিপু নদীতে কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ করে একটি জলাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। এর জল বিভিন্ন খাল পথের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। উক্ত নদী গুলির পাশাপাশি আরো অনেক ছোট বড় অনিত্যবহ নদী রয়েছে যারা সমগ্র মানচিত্রের স্থানে স্থানে বৃক্ষরূপী, কেন্দ্র বিমুখ এবং সমান্তরাল জলনির্গমন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। মানচিত্রটির উত্তর পশ্চিম এবং দক্ষিণ দিকে বেশকিছু বালিয়াড়ি দেখাযায় যার মাঝে কিছু কিছু ক্ষণস্থায়ী জলধারার অস্পষ্ট ছাপ চোখে পড়ে। প্রসঙ্গত স্থানীয় মানুষ পানীয় জলের জন্য নদীগুলি অপেক্ষা কুয়োর উপর নির্ভরশীল তাই জনবসতিগুলির নিকটে একাধিক কুয়ো দেখা যায়।
টোপোম্যাপ ৪৫ ডি/৭ নদ-নদী বিস্তারিত আলোচনা

জলবায়ু (CLIMATE)

মরু অঞ্চলে অবস্থানগত কারণে অঞ্চলটিতে স্বাভাবিকের থেকে বার্ষিক বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণ হয় যার পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ সেমির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। অপরদিকে স্থানটির গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা যেমন ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর উপর উঠে যায় তেমনি ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে রাতের বেলায় প্রায়শই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছে চলে আসে। বার্ষিক ও দৈনিক উষ্ণতার প্রসর (Range of Temperature) আবহবিকারে সাহায্য করে তাই স্থানে স্থানে একাধিক উন্মুক্ত শিলাস্তুপ ও টিলা দেখা যায়। প্রসঙ্গত অত্যধিক তাপমাত্রা অধিক বাষ্পীভবনে সাহায্য করে যার ফলে মরু উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়েছে।
 
            ● গ্রীষ্মকাল ( উষ্ণ শুষ্ক )- মার্চ থেকে জুন।            
            ● বর্ষাকাল ( উষ্ণ আর্দ্র )- জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর । 
            ● শীতকাল ( শুষ্ক শীতল )- অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী।
টোপোম্যাপ ৪৫ ডি/৭ বনভূমি  বিস্তারিত আলোচনা
স্বাভাবিক উদ্ভিদ (NATURAL VEGETATION)

মানচিত্রের উত্তর পূর্ব অংশে ঘন পর্ণমোচী বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায়। এছাড়া মানচিত্রের পূর্বদিকে  বানস ও সিপু নদীর মধ্যবর্তী দোয়াব অঞ্চলে সানান্য পরিমানে উন্মুক্ত বনভূমি দেখা যায়। মানচিত্রের প্রায় ২৫ শতাংশ স্থান বনভূমি অধিকার করে রয়েছে। এই অঞ্চলে প্রধানত দু প্রকার বনভূমি এখানে দেখা যায়, যেমন ব্যবছিন্ন মালভূমি অঞ্চলে বাঁশ ও শাল গাছের ঘন বনভূমি এবং অন্যদিকে সমভূমি অঞ্চলে যেখানে কৃষিকাজ অনুশীলন করা হয় না সেখানে কাঁটা জাতীয় ঝোপ ঝার, পাম ও ঘাসের জংল দেখা যায়।

জীবিকা (OCCUPATION)

অঞ্চলটির প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রামবাসী ঘোড়া, উট, ভেড়া ইত্যাদি গবাদি পশু প্রতিপালন করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে। এদের মধ্যে সিরোহী জাতের ছাগল প্রতিপালন জনপ্রিয়। জলবায়ুর সাথে সঙ্গতি রেখে যেসকল শস্য চাষ করা হয়ে থাকে তা নিম্নরূপ।

                ● শীতকাল ( রবি শস্য ): – গম, বার্লি এবং তুলা।
                ● বর্ষাকাল ( খারিপ শস্য): – বাজরা, জোয়ার, ভূট্টা।

টোপোম্যাপ ৪৫ ডি/৭ জনবসতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

জনবসতি ও যোগাযোগ  (SETTLEMENTS & COMMUNICATION)

প্রদত্ত ভৌগলিক অঞ্চলের উল্লেখ করার মতো জনবসতি বলতে দান্তেওয়ারা, চিত্রাসেনি এবং পান্থাওয়ারা ইত্যাদি । চিত্রাসেনি জনপদের মধ্যদিয়ে জাতীয় সড়ক ১৪ এবং পশ্চিম রেলপথের প্রধান শাখাটি অবস্থান করছে। রেলষ্টেশনের পাশাপাশি ডাকঘর, থানা প্রভৃতি নাগরিক পরিসেবা চিত্রাসেনি জনপদে রয়েছে। অপরদিকে মালভূমি অঞ্চলে একাধিক ছোট ও মাঝারি জনপদ দেখা যায় যাদের মধ্যে পেদার, ধিবরি, গঙ্গুওয়ারা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই জনপদ গুলি প্রধানত বনভুমির কাঠ চেরাই, উপজাত দ্রব্য সংগ্রহ প্রভৃতির কারনে গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি দক্ষিণের বালিয়াড়ি অঞ্চলে বেশকিছু বসতি দেখাযায় যেমন বদরপুরা, ভাঘরোল, সাংলা, মোতি ভাতামল, আন্ত্রলি, ভাকর ইত্যাদি। বিদ্যুৎ সরবরাহ কমবেশি বর্তমান। সমগ্র অঞ্চলটিকে বিভিন্ন প্রকার সড়ক পথ জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে তাই পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটের উপর ভালো।  

উপসংহার (CONCLUSION)

পরিশেষে উপসংহারে একটি কথা বলা যায় যে প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক মাপকাঠির বিচারে অঞ্চলটি আজো পিছিয়ে রয়েছে। সমগ্র অঞ্চলটির জনবসতি গুলি আজো আধুনিক নাগরিক পরিসেবা থেকে অনেক দূরে অনুন্নয়নের তিমিরে অবস্থান করছে।


Share:

Topographical Map 45 D/10 Explanation for Class 12 টোপোম্যাপ ৪৫ ডি/১০ বিস্তারিত আলোচনা দ্বাদশ শ্রেণী ভূগোল

প্রদত্ত ভূসংস্থানিক মানচিত্রটির নম্বর 45 D/10 যা ভারতের গুজরাট রাজ্যের বানসকাঁথা জেলা  এবং রাজস্থান রাজ্যর শিরহী জেলার অংশ বিশেষ। প্রতিনিধিত্বমূলক স্কেল 1:50,000 অনুসারে  মানচিত্রটির মোট ভৌগোলিক আয়তন আনুমানিক 716 বর্গ কিমি এবং  অঞ্চলটি  24 ডিগ্রি 30 মিনিট উত্তর অক্ষাংশ থেকে 24 ডিগ্রী 45 মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং 72 ডিগ্রি 30 মিনিট পূর্ব থেকে 72 ডিগ্রী 45 মিনিট পূর্ব দেশান্তর রেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটি একটি 15 মিনিট 15 মিনিট শীট যা 1959-1960 সালে অঞ্চলটি ভারতীয় সর্বেক্ষণ বিভাগের দ্বারা প্রথমবারের জন্য জরিপ করা হয় এবং 1961 সালে ভুসংস্থানিক মানচিত্র হিসাবে এর প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। অঞ্চলটির চৌম্বক নতি 1/4° পশ্চিম, যা ১৯৬০ সাল থেকে 1° হারে কমে আসছে। মানচিত্রে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট আর্থ-সামাজিক ভূ-দৃশ্যাবলীর পাশাপাশি 20 মিটার ব্যবধানের সমোন্নতি রেখা দ্বারা ভূমিরূপ দেখানো হয়েছে। মানচিত্রের দক্ষিণপূর্ব অংশের পার্বত্য অঞ্চলে ও পর্ণমোচী ধরনের বনভূমি রয়েছে এবং বাকি স্থানে ছোট ছোট ঝোপ এবং কাটা জাতীয় উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়।  অঞ্চলটির প্রধান নদী হল সিপু, সুকলি এবং জাম্বুয়া যাদের শুষ্ক নদীখাত উত্তর-পূর্ব দিক থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে বিস্তৃত। মানচিত্রের দক্ষিণ পূর্বে একমাত্র পৌর জনবসতি তথা শৈল শহর হল মাউন্ট আবু এবং বাকি অংশে বেশকিছু গ্রামীণ জনবসতি দেখা যায় যেগুলি পাকা সড়ক পথ দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত।

Source:https://www.surveyofindia.gov.in/pages/educational-map-series

প্রাকৃতিক সামাজিক ভূ-দৃশ্যাবলীর তালিকা

ভূ-সংস্থানিক মাপদন্ড                   

ভূ-প্রাকৃতিক একক

পার্বত্য অঞ্চল

ক্ষয়জাত সমভূমি

বিস্তার

দক্ষিন-পুর্ব

বাকি অংশ

আনুমানিক বিস্তার

30%

70%

সর্বচ্চো  উচ্চতা

1426m

300m

সর্বনিম্ন উচ্চতা

300m

225m

আপেক্ষিক উচ্চতা

1126m

75m

সর্বচ্চো ঢাল

19°03’54”

1°47’58”

সর্বনিম্ন ঢাল 

15°23’14”

0°53’04”

সাধারণ ঢাল 

দক্ষিণ পুর্ব দিক থেকে পশ্চিমে 

জলনির্গমন পরিসংখ্যা

অধিক 

মধ্যম 

জনবসতি

মুখ্যশহর

বিক্ষিপ্ত 

যোগাযোগ ব্যাবস্থা

উন্নত 

মধ্যম

*Source: Topographical map sheet number 45 D/10.


ভূ-প্রাকৃতি (PHYSIOGRAPHY)

প্রদত্ত মানচিত্রে নির্দেশিত অঞ্চলটি দুটি স্বতন্ত্র ভূ প্রাকৃতিক বিভাগের বিভক্ত। প্রকৃতপক্ষে এটি আরাবল্লী পর্বতের পশ্চিম ঢালের অংশ বিশেষ । আরাবল্লী পর্বতের 1400 মিটারের বেশি উচ্চতা বিশিষ্ট  শৈলশিরা গুলি উত্তর-পূর্ব দিক থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে সমান্তরালে অবস্থান করছে। অপরদিকে মানচিত্রের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ক্ষয় যত সমভূমি যার স্থানে স্থানে উন্মুক্ত পাথরের টিলা দেখা যায়। বৈচিত্রহীন এই সমভূমি অঞ্চলের  উচ্চতা 100 থেকে 260 মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে অঞ্চলটির গড় ঢাল ক্রমে বৃদ্ধি পেয়েছে। 

চূড়া 

অবস্থান 

উচ্চতা (mtrs.)

কুয়েকা পাহাড় 

C3

1401

ভীমালি কা পাহাড় 

C3

1387

দেওলি 

C3

1352

রামকুন্ড কা পাহাড় 

C2

1327

আথভী পাহাড় 

C2

1277

কালিয়া ডুঙ্গার 

B2

639

ভূনি মাগরি 

C2

437

হরা মাগরা

A2

413

*Source: Topographical map sheet number 45 D/10.

জলনির্গমন প্রণালী (DRAINAGE)

বেসীরভাগ নদী গুলি অনিত্য প্রকৃতির। তাই বর্ষাকালে নদিতে জল থাকলেও গ্রীষ্মকালে শুকিয়ে যায়। সমভূমি অঞ্চলের নদী গুলির উর্ধ্ব প্রবাহে জলনির্গমন প্রণালীর আকৃতি পাখা বা বৃক্ষরূপী প্রকৃতির। এই অঞ্চলের প্রধান নদী সিপু যা মাউন্ট আবুর উত্তরে উৎপত্তি লাভ করে দক্ষিণ পশ্চিমে দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এর নদী খাতের চওড়া স্থান বিশেষে ৫০০ মিটারের বেশি দেখা যায়। সিপু নদীর ডান তীরের উপনদী গুলি হল সুকলি, উন্ডা ওয়ালা এবং ডিওর নদী। অপরদিকে বাম তীরের উপনদী গুলি হল সুকলি, ধাবলি, দেবাঙ্গন এবং গোগুয়া নদী। অপরদিকে আরাবল্লীর পার্বত্য এলাকায় কেন্দ্র বিমুখী, সমান্তরাল, আয়তাকার প্রভৃতি জলনির্গময় প্রণালী দেখা যায়। যেহেতু অঞ্চলটি মরুভূমির নিকটবর্তী, তাই জলের আঘাতের শিথিল মাটি খুব সহজেই ধুয়ে যায় এবং জলধারা গুলি একাধিক সুস্পষ্ট নদীখাত সৃষ্টি করে।

জলবায়ু (CLIMATE)

পশ্চিম ভারতে অবস্থানের কারণে অঞ্চলটিতে দেশের বাকি অংশের থেকে তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় যার বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ সেমির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা যেমন ৪৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর উপর উঠে যায় তেমনি ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে রাতের বেলায় প্রায়শই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছে চলে আসে। অত্যধিজ তাপমাত্রা অধিক বাষ্পিভবনে সাহায্য করে যার ফলে মরু উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়েছে।

            ● গ্রষ্মকাল ( উষ্ণ শুষ্ক )- মার্চ থেকে জুন।
            ● বর্ষাকাল ( উষ্ণ আর্দ্র )- জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর ।
            ● শীতকাল ( শুষ্ক শীতল )- অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ (NATURAL VEGETATION)

অঞ্চলটি দক্ষিণ-পশ্চিমে আরাবল্লীর পার্বত্য অঞ্চলে ঘন পর্ণমোচী বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায় যা মানচিত্রে প্রায় 40 শতাংশ স্থান অধিকার করে রয়েছে। প্রধানত দু প্রকার বনভূমি এখানে দেখা যায়, যেমন বাঁশ ও শাল গাছের ঘন বনভূমি এবং অন্যদিকে সমভূমি অঞ্চলে যেখানে কৃষিকাজ অনুশীলন করা হয় না সেখানে কাঁটা জাতীয় ঝোপ ঝার, পাম ও ঘাসের জংল।
জীবিকা (OCCUPATION)

সমভূমি অঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রামবাসী ঘোড়া, উট, ভেড়া ইত্যাদি গবাদি পশু প্রতিপালন করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে। পাশাপাশি মাউন্ট আবু শৈল শহরে একাধিক সামাজিক পরিষেবা কেন্দ্রীভূত হওয়ায় শহরে বসবাস কারী মানুষের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর অর্থনৈতিক কার্যাবলীর সাথে যুক্ত। খুব স্বল্প পরিমাণ মানুষ আরাবল্লীর পাদদেশে অবস্থিত বনবস্তি গুলিতে কাঠ চেড়াই শিল্পের সাথে যুক্ত। জলবায়ুর সাথে সঙ্গতি রেখে যে সকল শস্য চাষ করা হয়ে থাকে তা নিম্নরূপ।

            ● শীতকাল ( রবি শস্য ): – গম, বার্লি এবং তুলা।
            ● বর্ষাকাল ( খারিপ শস্য): – বাজরা, জোয়ার, ভূট্টা।

জনবসতি (SETTLEMENTS)

প্রদত্ত ভৌগলিক অঞ্চলের প্রধান জনবসতি তথা মুখ্য প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হল মাউন্ট আবু। অপরদিকে সমভূমি অঞ্চলে একাধিক ছোট ও মাঝারি জনপদ দেখা যায় যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জনপদ হল আনাদ্রা, রেভদার, দান্তারি, দাত্তানি ইত্যাদি। নাগরিক পরিষেবার ভিত্তিতে জনবসতিগুলির একটি ক্রম তালিকা দেওয়া হলো।

বসতি

অবস্থান

রকম 

নাগরিক পরিসেবা 

ABU

C2

কেন্দ্রীভূত জনবসতি

থানা, ডাক বাংলো, হাঁসপাতাল,ইন্সপেকশন বাংলোসরকারি হাইস্কুল, যুব ছাত্রাবাস, পাঠাগার, সোফিয়া হাইস্কুল, রেস্ট-হাউস, হোটেল,পশু-হাঁসপাতাল, মন্দির, চার্চ, ব্যাংক, পৌরসভা, ক্লাব , পাওয়ার হাউস। 

আনাদ্রা

B2

মাঝারি ঘন জনবসতি

পোস্ট টেলিগ্রাফ অফিস,ডাক-বাংলো, থানাঔষধালয়, মন্দির 

রেভদার

A2

মাঝারি ঘন জনবসতি

পোস্ট টেলিগ্রাফ অফিস,ডাক-বাংলো,থানা,মন্দির

দান্তারি 

A1

মাঝারি ঘন জনবসতি

পোস্ট অফিস,থানা, মন্দির

পামেরা 

B1

মাঝারি ঘন জনবসতি

পোস্ট অফিসথানা

সিরোরি

C1

মাঝারি ঘন জনবসতি

পোস্ট অফিস, ঔষধালয় 

দাত্তানি 

B3

বিক্ষিপ্ত বসতি 

পোস্ট অফিস, মন্দির

ডোলপুরা 

B3

বিক্ষিপ্ত বসতি 

মন্দির 

রামপুর খেরিয়া 

A3

বিক্ষিপ্ত বসতি 

মন্দির

আসাওয়া

C1

ক্ষুদ্র বসতি 

নেই

ফতেপুরা 

A3

ক্ষুদ্র বসতি 

নেই

বাগেরি 

C3

ক্ষুদ্র বসতি 

নেই

ধাবলি 

B3

ক্ষুদ্র বসতি 

নেই

*Source: Topographical map sheet number 45 D/10.

পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা (TRANSPORT and COMMUNICATIONS)

অঞ্চলটির পশ্চিমে রেভদার থেকে পূর্ব দিকে সিররি পর্যন্ত ১৬৮ নং জাতীয় সড়ক প্রসারিত রয়েছে। অপরদিকে মাউন্ট আবু এর সাথে অপর একটি সড়ক পথ আবু রোড এর সাথে যুক্ত। এছাড়াও প্রায় অসংখ্য প্রধান ও অপ্রধান সড়ক পথ অঞ্চলটিকে জালের মত ধরে রেখেছে। এদের মধ্যে কিছু পথ শুধুমাত্র শুষ্ক ঋতুতে পরিবহনের যোগ্য। সড়ক পথের পাশাপাশি পশ্চিম থেকে উত্তর পূর্বে এবং পশ্চিম থেকে দক্ষিণে প্রধান বিদ্যুতের সরবরাহ কারী লাইন রয়েছে।
উপসংহার (CONCLUSION)

সবশেষে উপসং হারে বলা যায় যে প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক মাপকাঠির বিচারে অঞ্চলটিতে একটি তীব্র পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আরাবল্লীর পার্বত্য অঞ্চল দূর্গম হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র পর্যটকের আনাগোনা থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য, স্কুল কলেজ, বিনোদন প্রভৃতি নাগরিক পরিষেবার কেন্দ্রীভবন ঘটেছে। আধুনিক শৈল শহর গড়ে উঠেছে। অপরদিকে সমভূমির জনবসতি গুলি আজো আধুনিক নাগরিক পরিসেবা থেকে অনেক দূরে অনুন্নয়ন এর ধারক হিসেবে অবস্থান করছে।

B}|lkxzmkx|C
Share:

Popular Posts

Recent Posts

Total Pageviews