সমুদ্রস্রোত কাকে বলে ?
নিয়ত বায়ুপ্রবাহ, পৃথিবীর আবর্তন গতি, লবণতার তারতম্য,উষ্ণতার পার্থক্য ইত্যাদি কারনে সমুদ্রের জলরাশি যখন এক স্থান থেকে অন্যত্র পরিবাহিত হয় তখন তাকে বলে সমুদ্রস্রোত।
সমুদ্র তরঙ্গ কাকে বলে ?
প্রবল বায়ু তাড়িত হয়ে সমুদ্রের জলরাশি যখন একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ওঠানামা করে বা আন্দোলিত হয়, তখন তাকে বলে সমুদ্র তরঙ্গ বা সমুদ্রের ঢেউ।
ফেচ কি ?
বায়ু বিনা বাধায় উন্মুক্ত সাগরে কতটা পথ অতিক্রম করল, সেই দূরত্বকেই ফেচ দূরত্ব বলে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা তরঙ্গের উচ্চতা ও ক্ষমতা এর সাথে সম্পর্কযুক্ত।
সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারন গুলি সংক্ষেপে আলোচনা কর ?
সমুদ্রের জলরাশির একস্থান থেকে অন্যস্থানে সঞ্চালনকে সমুদ্রস্রোত বলে। যে সকল কারনে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি হয়, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারন গুলি নিম্নরূপ -
নিয়ত বায়ুপ্রবাহ
সমুদ্র বিজ্ঞানীদের মতে প্রবল নিয়ত বায়ু প্রবাহই সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির অন্যতম কারন। প্রবল নিয়ত বায়ু যখন সমুদ্রের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন জলরাশির উপর যে প্রভাব ফেলে তার ফলে সমুদ্রের জলরাশি নিয়ত বায়ুর দিকক্রমে সঞ্চারিত হতে বাধ্য হয়।
উষ্ণতার পার্থক্য
সমুদ্রের উষ্ণতার মূল উৎস হল সৌরতাপ। কিন্তু সৌরতাপ সমুদ্রের কোন অংশে সমানভাবে পড়ে না। নিম্ন অক্ষাংশে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠস্থ জল অধিক উষ্ণ হয় এবং আয়তনে বৃদ্ধি পেয়ে ( ঘনত্ব কমে যায়) বহিঃস্রোত রূপে শীতল অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে, উচ্চ অক্ষাংশে সৌরতাপের পরিমাণ কম থাকায়, সমুদ্রের জল শীতল ও ভারী থাকে, তাই এই অঞ্চলের জল অন্তঃস্রোত রূপে উষ্ণ সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়
লবণতার তারতম্য
উষ্ণতা তথা বাষ্পীভবনের পরিমাণ, নদী ও বৃষ্টির জলের সংমিশ্রণ, বরফ গলা জলের সরবরাহ, ইত্যাদি কারণে সমুদ্র জলের লবনতা পার্থক্য ঘটে। লবনতা যেখানে বেশি, সেই স্থানের জল তুলনামূলকভাবে অল্প লবণাক্ত জলের তুলনায় ভারী। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠে জলতলের উচ্চতার যে পার্থক্য ঘটে তার ফলে অল্প লবণাক্ত জল বহিঃস্রোত রূপে এবং অধিক লবণাক্ত জল অন্তঃস্রোত রূপে একে অপরের দিকে ধাবিত হয় এবং সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি করে।
পৃথিবীর আবর্তন
পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য যে কেন্দ্র বহিঃ মুখী সৃষ্টি হয়েছে, তার পরিমাণ সর্বত্র সমান নয়। নিরক্ষরেখা বরাবর কেন্দ্র বহিঃমুখী শক্তির প্রভাব মেরু অঞ্চলের তুলনায় বেশি। এর প্রধান কারণ মেরু বৃত্ত অপেক্ষা নিরক্ষরেখার পরিধি অনেক বেশি। এই বৈষম্যময় কেন্দ্র বহিঃমুখী শক্তির প্রভাবে নিরক্ষীয় অঞ্চলের জল মেরু অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়।
বায়ুর চাপ
বায়ুর চাপ সমুদ্রস্রোত সৃষ্টিতে দুইভাবে ক্রিয়াশীল। যথা ১. যেখানে বায়ুর চাপ বেশি, সেই স্থানে সমুদ্রতল অধিক চাপে কিছুটা অবনমিত হয়ে পড়ে। এই সমতা ফিরিয়ে আনতে সমুদ্র জল সঞ্চারিত হয়। ২. বায়ুচাপের পার্থক্য বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় যা সমুদ্র জল কে এক স্থান থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে সাহায্য করে।
বাষ্পীভবনের পরিমাণ ও বৃষ্টিপাত
যে স্থানে বাষ্পীভবনের পরিমাণ বেশি সেই স্থানে সমুদ্রের জলতল কিছুটা অবনমিত হয়ে পড়ে, তাই পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের জল ওই স্থানের দিকে স্থানান্তরিত হয়। পাশাপাশি বৃষ্টিপাত অধিক হলে সমুদ্রের জলতল কিছুটা উঁচু হয়ে ওঠে এবং বৃষ্টির জল হওয়ায় এর ঘনত্ব কম তাই এই জল বহিঃস্রোত রূপে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সঞ্চালিত হয়।
উক্ত কারন গুলির পাশাপাশি সামুদ্রিক জোয়ার ভাটা, মহাদেশ গুলির অবস্থান, বিভিন্ন সমুদ্রস্রোতের পারস্পারিক মিলন, উপকূল ভাগের আকৃতি, ঋতু পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় গুলি সমুদ্রস্রোতকে আংশিক পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ করে।
No comments:
Post a Comment