পশ্চিম উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূল, পূর্বে ইউরোপ আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল, উত্তরে গ্রিনল্যান্ড এবং দক্ষিণে কুমেরু সাগর পরিবেষ্টিত ইংরেজি “S” অক্ষর বিশিষ্ট পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর আটলান্টিক অবস্থিত । এই মহাসাগরকে প্রায় মাঝ বরাবর নিরক্ষরেখা দুই ভাগে বিভক্ত করেছে যথা উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর এবং দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর। পৃথিবীর আবর্তন, নিয়ত বায়ু প্রবাহ, বাষ্পীভবনের হ্রাস বৃদ্ধি, লবণতার তারতম্য ইত্যাদি কারণে আটলান্টিক মহাসাগরে অসংখ্য সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। অবস্থান অনুসারে এইসকল স্রোত গুলির পরিচয় নিচে দেওয়া হল -
উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্র স্রোত সমূহ
উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝ বরাবর প্রসারিত নিরক্ষরেখার উত্তরে পৃথিবীর আবর্তন গতি ও উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে ১) উত্তর আটলান্টিক উষ্ণ নিরক্ষীয় স্রোতের উৎপত্তি লাভ করে পশ্চিমে অগ্রসর হয় এবং পশ্চিম ক্যারিবিয়ান সাগরে দক্ষিণ নিরক্ষীয় একটি শাখায় মিলিত হয়ে ২) ক্যারিবিয়ান স্রোত নামে মেক্সিকোর উপকূল বরাবর উষ্ণ স্রোত রূপে অগ্রসর হয়। ৩) কুমেরু সাগর থেকে শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের সাথে মিলিত হয়ে হিমপ্রাচীর গড়ে তোলার পর পশ্চিমা বায়ু তাড়িত হয়ে ৪) উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত নামে পূর্ব দিকে ধাবিত হয়। উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত থেকে একটি শাখা ৫) শীতল ক্যারিবিয়ান স্রোত নামে উৎস অঞ্চলের ফিরে আসে এবং ৬) এর একটি শাখা গিনি স্রোত নামে দক্ষিনে অগ্রসর হয় এবং অপর একটি শাখা ৭) উষ্ণ আটলান্টিক স্রোত নামে ব্রিটেনের উত্তর উপকূল দিয়ে সুমেরু ও কুমেরু সাগরে প্রবেশ করে এবং এর একটি শাখা ৮ ) গ্রীনল্যান্ড স্রোত নামে আইসল্যান্ড কে প্রদক্ষিণ করে পুনরায় দক্ষিনে এগিয়ে আসে। উপসাগরীয় স্রোতের অপর একটি শাখা উষ্ণ স্রোত রূপে গ্রীনল্যান্ডের দক্ষিণ প্রান্তে ঘুরে সুমেরু সাগর থেকে আসা শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের বিপরীতে গমন করে যাকে ৯) পশ্চিম গ্রীনল্যান্ড স্রোত বলে।
উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান প্রধান এই স্রোত গুলি উপকূল বরাবর চক্রাকারে আবর্তিত হাওয়ায় উত্তর আটলান্টিকের মধ্যভাগের জল প্রায় আলোড়নহীন অবস্থায় বিভিন্ন প্রকার শৈবাল ও আগাছায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। তাই উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্য ভাগ শৈবাল সাগর নামে পরিচিত।
দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোত সমূহ
নিরক্ষরেখার দক্ষিণে সৃষ্ট উষ্ণ দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত আয়ন বায়ু তাড়িত হয়ে পশ্চিমা ব্রাজিল উপকূলের দিকে প্রবাহিত হয় যার একটি শাখা ক্যারিবিয়ান সাগরে উত্তর আটলান্টিক স্রোত এর সাথে মিলিত হয় এবং অপর শাখাটি ১১) উষ্ণ ব্রাজিল স্রোত নামে ব্রাজিলের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। কুমেরু সাগর থেকে আগত শীতল কুমেরু স্রোতের একটি শাখা ১২) ফকল্যান্ড দ্বীপের পাশ দিয়ে শীতল ফকল্যান্ড স্রোত নামে উত্তরে এগিয়ে আসে এবং উষ্ণ ব্রাজিল স্রোতের সাথে মিলিত হয় পশ্চিমা বায়ুর প্রবাহে শীতল স্রোত রূপে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়। ১৩) এই শীতল স্রোত ও শীতল কুমেরু সাগরের কুমেরু স্রোতের একটি শাখা আফ্রিকার দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলবরাবর প্রবাহিত হয়ে ১৪) শীতল বেঙ্গুয়েলা স্রোত নামে উত্তর দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত এর সাথে মিলিত হয় এবং এর একটি শাখা সরাসরি উত্তরে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত থেকে নেমে আসা গিনি স্রোত আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে পরস্পর মিলিত হয়। প্রসঙ্গত কুমেরু স্রোতের একটি শাখা সরাসরি পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে।
দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের গোধূলি উপকূল বরাবর চক্রাকারে আবর্তিত হয়, তাই দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের তুলনামূলকভাবে আলোর অবস্থায় থাকে । তবে দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের পরিমান বেশি থাকায় বিনা বাধায় বয়ে চলা প্রবল বায়ুপ্রবাহে সমুদ্র তরঙ্গের প্রভাব অনেক বেশি থাকে, ফলে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মত এখানে আগাছা জন্মায় তত বেশি প্রকট নয়।
উত্তর ও দক্ষিণ উষ্ণ আটলান্টিক স্রোত দুটি পশ্চিমে অগ্রসর হয় এবং এর পাশাপাশি দুটি স্রোত পশ্চিম থেকে পূর্বে অগ্রসর হয় যা উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত নামে পরিচিত।
No comments:
Post a Comment