Classification of Cyclone Class 10 Geography || ঘূর্ণবাত ও ঘূর্ণবাতের শ্রেণী বিভাগ দশম শ্রেণী ভূগোল || WBBSE

ঘূর্ণবাত কাকে বলে ? ঘূর্ণবাত কয় প্রকার ও কি কি ?

ভূপৃষ্ঠের অল্প পরিসর স্থান জুড়ে যদি হঠাৎ কোন তীব্র নিম্নচাপ গঠিত হয়, তবে ওই নিম্নচাপ পরিপূরণে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তুলনামূলক ভাবে শীতল ও ভারী বায়ু, নিয়ত বায়ুর বিপরীতে উত্তর গোলার্ধে বামাবর্তে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বায়ু ডানাবর্তে কুণ্ডলাকারে আবর্তিত হতে হতে প্রবল বেগে নিম্নচাপ কেন্দ্রে প্রবেশ করে এবং ঊর্ধ্বগামী হয়। এই রোগ কুণ্ডলাকৃত এবং কেন্দ্রমুখী বিধ্বংসী প্রবল বায়ুপ্রবাহকে ঘূর্ণবাত বলে। 


এই বায়ুর আবির্ভাব হঠাৎ হয়, এবং হঠাৎ-ই বিলীন হয়ে যায়। তাই এর প্রকৃতি আকস্মিক প্রকৃতির। এই বায়ুর আসা-যাওয়ার কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তাই একে অনিয়মিত বায়ু বলে। উৎপত্তি ও স্থানভেদে ঘূর্ণবাত কে দুই ভাগে ভাগ করা যায় - 


উৎপত্তি ও স্থানভেদে ঘূর্ণবাত কে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । 


A) উষ্ণমণ্ডলীয় বা ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণবাত

গ্রীষ্মমণ্ডলে বা উষ্ণমন্ডলে অর্থাৎ নিরক্ষরেখার দুই দিকে 30° অক্ষাংশের মধ্যে উষ্ণ সমুদ্র বক্ষে হঠাৎ সৃষ্ট তীব্র নিম্নচাপ গঠনে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের আবির্ভাব ঘটে। এই প্রকার ঘূর্ণবাত এর গতি ঘন্টায় 80 থেকে 120 কিমি হয়ে থাকে। এই প্রকার ঘূর্ণবাত অত্যন্ত বিধ্বংসী হয়ে থাকে। ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রটিকে Eye of the depression বা ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলে। প্রকৃতি ভেদে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - প্রবল ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত এবং দুর্বল ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত।


ক) প্রবল ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত

প্রবল ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত অত্যন্ত বিধ্বংসী এবং ইহা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত।

১) দক্ষিণ চীন সাগরে ইহা টাইফুন নামে পরিচিত।

২) ক্যারিবিয়ান সাগরে ইহা হারিকেন নামে পরিচিত।

৩) আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে তথা ভারত মহাসাগরে এই প্রবল ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত সাইক্লোন নামে পরিচিত।

প্রসঙ্গত, উল্লেখ করা যায় যে এই প্রকার ঘূর্ণবাতের গতি ঘন্টায় 130 কিমি অতিক্রম করলে তাকে টর্নেডো বলে।

খ) দুর্বল ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত

তুলনামূলকভাবে দুর্বল প্রকৃতির নিম্নচাপ গঠনে গড়ে ওঠা ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত কে দুর্বল ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বলে। বঙ্গোপসাগরে বর্ষা ও শীত ঋতুতে এই জাতীয় ঘূর্ণবাতের প্রভাবে দীর্ঘস্থায়ী ও দুর্যোগপূর্ণ বৃষ্টিবহুল আবহাওয়ার সৃষ্টি করে যা অনেক ক্ষেত্রেই বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।



B) নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলীয় বা মধ্য অক্ষাংশীয় ঘূর্ণবাত

নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলে অল্প পরিসর স্থান কোন তীব্র নিম্নচাপ গঠিত হলে ওই নিম্নচাপ পরিপূরনে বিপরীত ধর্মী দুই প্রকার বায়ু যথা মেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী বায়ু এবং ক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ ও হাল্কা বায়ু পরস্পরের মুখোমুখি ধাবিত হয়, এবং পরস্পর মিলিত হয়ে একটি সীমান্ত গড়ে তোলে। বিপরীত ধর্মী এই দুই বায়ুর সীমান্তে যে আলোড়নের সৃষ্টি হয় তার ফলে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত গঠিত হয়।

প্রখ্যাত আবহাওয়া বিজ্ঞানী বার্জেস নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের জীবনচক্রকে 6 টি পর্যায় বিভক্ত করেছেন।


১) প্রথম পর্যায়ে দুটি বিপরীত ধর্মী বায়ুপুঞ্জ পরস্পর মুখোমুখি অবস্থান করে।

২) দ্বিতীয় পর্যায়ে উষ্ণ বায়ুর তুলনায় শীতল বায়ুপুঞ্জ অধিক ভারী ও গতি সম্পন্ন হাওয়ায় সীমান্তে তরঙ্গের সৃষ্টি হয়।

৩) তৃতীয় পর্যায়ে উষ্ণ বায়ুপুঞ্জের একটি অংশ শীতল বায়ুপুঞ্জের ওপর তীর্যকভাবে উঠে যায়।

৪) চতুর্থ পর্যায়ে তরঙ্গটি অত্যন্ত প্রবল ও প্রকট হওয়ায় এবং অধিক গতিশীলতার জন্য উষ্ণ সীমান্তের কাছে চলে আসে, তার ফলে অতীব সূক্ষ্মকোণের সৃষ্টি হয়। 

৫) পঞ্চম পর্যায়ে, শীতল বায়ুপুঞ্জ সক্রিয় হওয়ায়, উষ্ণ সীমান্ত কে ধরে ফেলে, এর ফলে উষ্ণ বায়ু উপরে উঠে যায় এবং অক্লুডেড বা সমাপিত সীমান্ত গঠন করে।

৬) ষষ্ঠ পর্যায় হল ঘূর্ণবাতের শেষ পর্যায় এবং এই পর্যায় থেকে ঘর্ণীটি শীতল বায়ুপুঞ্জের মধ্যে ক্রমশ মিলিয়ে যেতে থাকে ফলে ঘূর্ণবাতটিও ধীরে ধীরে অস্তোমিত হয়।


Share:

No comments:

Post a Comment

Popular Posts

Recent Posts

Total Pageviews