কিন্ডার গার্টেন লেভেলে পড়াশুনার চাপ নেই কিন্তু ছোটবেলায় প্রাতিদিন সকাল সকাল উঠে স্নান খাওয়া দাওয়া করে স্কুলে যাওয়া ভাল লাগতনা আমার। সেই তুলনায় পালাকরে ঠাকুমা ও দিদার কাছে শুয়ে শুয়ে গল্প শুনতে ভাল লাগত। প্রায় পচিশ বছর আগের সাল তারিখ ঠিক মনেনেই, তবে এই সময় একদিন যেন হাতে চাদ পেয়ে গেলাম! প্রতিদিন সকালে উঠতাম আর শুনতাম আজ হরতাল তাই স্কুল হবে না, কালও বন্ধ, তার পরদিনও ধর্মঘট! দুএকদিন নয় একটানা অনেকদিন। আজ ভারত বন্ধ, কাল বাংলা বন্ধ, পরশু জেলায় সাধারন ধর্মঘট। রাজনৈতিক ডামাডোলের কারন কি তখন না বুঝতে পারলেও সবার মুখে একটাই নাম শুনতাম, তিনবিঘা কড়িডর। বাংলাদেশকে কড়িডরের জায়গা দেওয়া হবে কিনা ?
পরবর্তী দীর্ঘ আড়াই দশকে তিনবিঘা করিডর বারে বারে ঘুরে ফিরে খবরের শিরোনামে এলেও কোচবিহার জেলার প্রান্তিক মহকুমার প্রত্যন্ত এই সীমান্তবর্তী এলাকায় যাওয়ার সুজোগ আগে আসেনি। এমনিতে সীমান্ত এলাকা বলতে মনের কোনে উকি দেয় চোরাচালান, গরুপাচার, পুলিশ ও বিএসএফ এর কড়াকড়ি। তাই যত দূরে থাকা যায় তত ভালো। কিন্তু একই জায়গা দিয়ে দুই দেশের মানুষ পারাপার করছে কিভাবে তা নিজে চাক্ষুস করার ইচ্ছে ছিল বহুদিনের। সুযোগ এল চিরঞ্জিবদার ভাই প্রদীপদার অফিসের কাজে মেখলীগঞ্জ আসাতে। প্রদীপদা থাকে কোলকাতায়, অনেকদিন দুজনের দেখা হয়না, তাই চিরঞ্জিব দা যাবে দেখা করতে। সাথে নিয়ে গেল আমাকেও।
অতপর গন্তব্য তিনবিঘা করিডর ভায়া মেখলীগঞ্জ। আমাদের যেতে হবে প্রায় ১৫০ কিমি উত্তর পশ্চিমে । তাই স্কুল থেকে সরাসরি বেড়িয়ে পড়লাম । যাত্রী বলতে ড্রাইভার দীপংকর ছাড়া আমি আর চিরঞ্জিব দা । দীর্ঘ ৩৪ বছরের অবহেলার পর বর্তমানে উত্তরের অকুলীন প্রান্তিক জেলাগুলিতে জাতীয় ও রাজ্য সড়কের কাজ পুরোদমে চলছে তাই ডাইভারসন, খানা-খন্দ, জ্যাম প্রভৃতি পেরিয়ে কোচবিহার থেকে মাথাভাঙ্গা পৌছতে সন্ধ্যা নেমে এল । এখনো প্রায় দ্বিগুণ পথ বাকী ! এদিকের রাস্তায় গাড়ির ভির নেই ঠিকই, তবে রাস্তার পিচেরও অবশিষ্ট নেই, সুতরাং গতি ১০-১৫, আমরাও কাহিল । জামালদা পার হয়ে আমরা উঠলাম চাংরাবান্ধ্যা হাইওয়েতে । এবারে যেন হাফ ছেড়ে বাচাগেল । জন্মসূত্রে কোচবিহার জেলার হলেও এদিকটায় আমার কোনদিন আসা হয়নি । পড়ন্ত বিকেলের আলোআঁধারি বাঁশঝাড় আর দূরে ধানক্ষেতের ওপারে বাড়িগুলিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে টিমটিম করে জ্বলা আলো । রাস্তায় লোকজনের তেমন দেখা নেই ! তাই সম্বল বলতে হাতের তালুতে বন্দী TAB ও গুগল ম্যাপের GPS । চারিদিকে এখন ভালো অন্ধকার । রাস্তা ছাড়া প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছেনা । সামনের বাঁক পেরতেই আমাদের পাশাপাশি চলতে শুরু করল কাঁটাতারের বেড়া । কিছুদূর পরপর হ্যলোজেনের হাইমাস্ট । অর্থাৎ ওপারেই বাংলাদেশ । রাস্তার এতো পাশে কাঁটাতার এই প্রথম দেখলাম । সে এক চরম উত্তেজনা, আবার একটু উতকন্ঠাও বটে ! ভুল রাস্তায় চলছি নাতো ? কাঁটাতারের ওপারে বাংলাদেশের বাড়ি ঘর বাজার রাস্তার আলো প্রায় সবই স্পষ্ট দেখাযাচ্ছে । রাস্তার পরপর হাম্পে ( Bump ) গাড়ি দুলে উঠতেই TAB এ চোখ পড়ল লেভেল ক্রসিং, রেললাইন পেড়তে পেড়তে জানালা দিয়ে মুখ বাড়াতেই বাঁপাশে চোখে পড়ল নিউ চ্যাংরাবান্ধ্যা ষ্টেশন । এবার আমরা চলেছি মেখলীগঞ্জের দিকে । সন্ধ্যা সাতটা । কিন্তু মনে হচ্ছে অনেক রাত । প্রায় অনেক দিন পর দুই ভাইয়ের দেখা, স্বভাব সুলভ হাসি ঠাট্টা ও কথোপকথনের মাঝে চিরঞ্জিবদা পরিচয় করিয়ে দিল আমাকে প্রদীপদার সাথে। ক্ষণিকের সাক্ষাতেই যেন আপন হয়ে গেলাম। গরম গরম চা দিয়ে সন্ধ্যার টিফিনের পর আমরা এগোলাম পরবর্তী গন্তব্যের দিকে। নিজের জন্য বরাদ্ধ সরকারী গাড়ী ছেড়ে প্রদীপদা উঠেছে আমাদের সাথে।
পরবর্তী দীর্ঘ আড়াই দশকে তিনবিঘা করিডর বারে বারে ঘুরে ফিরে খবরের শিরোনামে এলেও কোচবিহার জেলার প্রান্তিক মহকুমার প্রত্যন্ত এই সীমান্তবর্তী এলাকায় যাওয়ার সুজোগ আগে আসেনি। এমনিতে সীমান্ত এলাকা বলতে মনের কোনে উকি দেয় চোরাচালান, গরুপাচার, পুলিশ ও বিএসএফ এর কড়াকড়ি। তাই যত দূরে থাকা যায় তত ভালো। কিন্তু একই জায়গা দিয়ে দুই দেশের মানুষ পারাপার করছে কিভাবে তা নিজে চাক্ষুস করার ইচ্ছে ছিল বহুদিনের। সুযোগ এল চিরঞ্জিবদার ভাই প্রদীপদার অফিসের কাজে মেখলীগঞ্জ আসাতে। প্রদীপদা থাকে কোলকাতায়, অনেকদিন দুজনের দেখা হয়না, তাই চিরঞ্জিব দা যাবে দেখা করতে। সাথে নিয়ে গেল আমাকেও।
অতপর গন্তব্য তিনবিঘা করিডর ভায়া মেখলীগঞ্জ। আমাদের যেতে হবে প্রায় ১৫০ কিমি উত্তর পশ্চিমে । তাই স্কুল থেকে সরাসরি বেড়িয়ে পড়লাম । যাত্রী বলতে ড্রাইভার দীপংকর ছাড়া আমি আর চিরঞ্জিব দা । দীর্ঘ ৩৪ বছরের অবহেলার পর বর্তমানে উত্তরের অকুলীন প্রান্তিক জেলাগুলিতে জাতীয় ও রাজ্য সড়কের কাজ পুরোদমে চলছে তাই ডাইভারসন, খানা-খন্দ, জ্যাম প্রভৃতি পেরিয়ে কোচবিহার থেকে মাথাভাঙ্গা পৌছতে সন্ধ্যা নেমে এল । এখনো প্রায় দ্বিগুণ পথ বাকী ! এদিকের রাস্তায় গাড়ির ভির নেই ঠিকই, তবে রাস্তার পিচেরও অবশিষ্ট নেই, সুতরাং গতি ১০-১৫, আমরাও কাহিল । জামালদা পার হয়ে আমরা উঠলাম চাংরাবান্ধ্যা হাইওয়েতে । এবারে যেন হাফ ছেড়ে বাচাগেল । জন্মসূত্রে কোচবিহার জেলার হলেও এদিকটায় আমার কোনদিন আসা হয়নি । পড়ন্ত বিকেলের আলোআঁধারি বাঁশঝাড় আর দূরে ধানক্ষেতের ওপারে বাড়িগুলিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে টিমটিম করে জ্বলা আলো । রাস্তায় লোকজনের তেমন দেখা নেই ! তাই সম্বল বলতে হাতের তালুতে বন্দী TAB ও গুগল ম্যাপের GPS । চারিদিকে এখন ভালো অন্ধকার । রাস্তা ছাড়া প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছেনা । সামনের বাঁক পেরতেই আমাদের পাশাপাশি চলতে শুরু করল কাঁটাতারের বেড়া । কিছুদূর পরপর হ্যলোজেনের হাইমাস্ট । অর্থাৎ ওপারেই বাংলাদেশ । রাস্তার এতো পাশে কাঁটাতার এই প্রথম দেখলাম । সে এক চরম উত্তেজনা, আবার একটু উতকন্ঠাও বটে ! ভুল রাস্তায় চলছি নাতো ? কাঁটাতারের ওপারে বাংলাদেশের বাড়ি ঘর বাজার রাস্তার আলো প্রায় সবই স্পষ্ট দেখাযাচ্ছে । রাস্তার পরপর হাম্পে ( Bump ) গাড়ি দুলে উঠতেই TAB এ চোখ পড়ল লেভেল ক্রসিং, রেললাইন পেড়তে পেড়তে জানালা দিয়ে মুখ বাড়াতেই বাঁপাশে চোখে পড়ল নিউ চ্যাংরাবান্ধ্যা ষ্টেশন । এবার আমরা চলেছি মেখলীগঞ্জের দিকে । সন্ধ্যা সাতটা । কিন্তু মনে হচ্ছে অনেক রাত । প্রায় অনেক দিন পর দুই ভাইয়ের দেখা, স্বভাব সুলভ হাসি ঠাট্টা ও কথোপকথনের মাঝে চিরঞ্জিবদা পরিচয় করিয়ে দিল আমাকে প্রদীপদার সাথে। ক্ষণিকের সাক্ষাতেই যেন আপন হয়ে গেলাম। গরম গরম চা দিয়ে সন্ধ্যার টিফিনের পর আমরা এগোলাম পরবর্তী গন্তব্যের দিকে। নিজের জন্য বরাদ্ধ সরকারী গাড়ী ছেড়ে প্রদীপদা উঠেছে আমাদের সাথে।
এবার আমরা চলেছি তিনবিঘা করিডর এরদিকে । পিচের সরুরাস্তা একেবেকে চলেছে । খানিক এগনোর পর বাঁপাশে প্রথম BSF outpost দেখা গেল । এরপর আমরা যত এগচ্ছি প্রায় প্রতি দশ-পনেড় হাত দূরে এক-দুজন BSF জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে আসছে , দূর থেকে পরখ করে দেখছে, হাত নেড়ে এগিয়ে যেতে ইশারা করছে । প্রত্যেকের বাহাতে টর্চ ডানহাতে লাঠি আর ঘারে AK-47 । একে সামনে সরকারী গাড়ি , পিছনের গাড়ীতে আমরা, তাই চাপ কম ! নাহলে কারক বিভক্তির প্রথম পাঠের উত্তর দিয়ে বিদায় নিতে হতো । BSF এর নজরদারী বেশী,সেই কারনেই রাতে মানুষের চলাচল হয়ত কম।
রাতের সীমান্ত পাহারায় সতন্ত্র প্রহরী |
রাতে তেমন দেখার নেই । তার উপর বিধি নিষেধের কড়াকড়ি। তাই চিরঞ্জিব দার কাছে আগামী কাল সকালে আবার আসার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরে গেলাম । আমরা উঠেছি তিনবিঘা টি রিসোর্ট হোটেল সিলভার ক্লাঊডে । গরম গরম তাওয়া রুটি ও দেশী মুরগীর কসা, সাথে স্যালাড এক কথায় অনবদ্য।
এখন রাত প্রায় বারোটা । চোখ আর মানছেনা ! তাই গেলেম আমার জন্য বরাদ্ধ ঘরে । রিসোর্ট বলে কথা ! ঘরে কি আছে আর কি নেই ? সারা দেওয়াল জুরে পর্দা । একপাশে কাঁচের দরজা ও বেলকনি । অন্যপাশে পুরটাই উইন্ডো । অন্ধ্যকার তাই দেখা যাচ্ছেনা কিন্তু জলের আওয়াজে বুঝতে পারছি পাশেই কোন নাম না জানা ছোটনদী বয়ে চলেছ । শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরেসামনের কাঁচের দেওয়ালের পর্দা সরিয়ে মখমলের বিছানা থেকে চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুম যাওয়ার বর্ণনা করার কব্জির মানে কলমের জোর আমার নেই । পাখির কলরবে ঘুম ভাঙল অনেক দিন পর । বাইরে হালকা কুয়াশা । সকালে সূর্যের প্রথম কিরণ চোখে পড়তেই বিছানায় উঠে বসলাম । বুঝতে পারছিনা কথায় এসেছি ? একি তিনবিঘা নাকি ডুয়ার্স কিংবা অন্যকোন রিসোর্ট ! চারিদিকে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ চাবাগান, মাঝে ছোট তবে নিরবিচ্ছিন্ন জলধারার সেই স্রোতস্বিনী । বলতে বাধা নেই এই নৈস্বর্গিক শুপ্রভাতের জন্য আবারো আমি শতশত কিমি কোমর ভাঙ্গা জার্নি করতে পারি ! অ্যাটাচ ওয়াশরুম তাই তাড়া নেই । ১০ মিনিটেই রেডি হয়ে নিচে নেমে এলাম।
প্রদীপদা, চিরঞ্জিবদা ও আমি বাদিক থেকে |
এখন রাত প্রায় বারোটা । চোখ আর মানছেনা ! তাই গেলেম আমার জন্য বরাদ্ধ ঘরে । রিসোর্ট বলে কথা ! ঘরে কি আছে আর কি নেই ? সারা দেওয়াল জুরে পর্দা । একপাশে কাঁচের দরজা ও বেলকনি । অন্যপাশে পুরটাই উইন্ডো । অন্ধ্যকার তাই দেখা যাচ্ছেনা কিন্তু জলের আওয়াজে বুঝতে পারছি পাশেই কোন নাম না জানা ছোটনদী বয়ে চলেছ । শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরেসামনের কাঁচের দেওয়ালের পর্দা সরিয়ে মখমলের বিছানা থেকে চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুম যাওয়ার বর্ণনা করার কব্জির মানে কলমের জোর আমার নেই । পাখির কলরবে ঘুম ভাঙল অনেক দিন পর । বাইরে হালকা কুয়াশা । সকালে সূর্যের প্রথম কিরণ চোখে পড়তেই বিছানায় উঠে বসলাম । বুঝতে পারছিনা কথায় এসেছি ? একি তিনবিঘা নাকি ডুয়ার্স কিংবা অন্যকোন রিসোর্ট ! চারিদিকে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ চাবাগান, মাঝে ছোট তবে নিরবিচ্ছিন্ন জলধারার সেই স্রোতস্বিনী । বলতে বাধা নেই এই নৈস্বর্গিক শুপ্রভাতের জন্য আবারো আমি শতশত কিমি কোমর ভাঙ্গা জার্নি করতে পারি ! অ্যাটাচ ওয়াশরুম তাই তাড়া নেই । ১০ মিনিটেই রেডি হয়ে নিচে নেমে এলাম।
রাতে রিসোর্টের বাইরেটা দেখা হয়নি । আজ ভালোকরে বাইরেটা দেখলাম। এক সময় এই রিসর্ট যে রমরমিয়ে চলত তা এর বহর দেখলেই মালুম হয়। তবে ভূইফোড় মানিমার্কেটিং কোম্পানি গুলি লাটে ওঠায় এখানকার জৌলসে যে ভাটা পরেছে তা সহজেই অনুমেয়। চারিদিকে আগাছায় ভর্তি। অযত্নের ছাপ দেখে ছোটবেলায় দেখা দা লস্ট ওয়ার্ল্ড ছবিতে দেখানো পুরনো জুরাসিক পার্কের কথা মনে পরে। প্রদীপদা এখনো রেডি হচ্ছে তাই আমরা ফেসবুকের জন্য কিছু পোজ দিলাম!
সখের পর্যটক |
সমস্ত জায়গাটি দেখতে অনেকটা আয়তকার পার্কের মতো । দুটি যোগাযোগ কারী পিচেররাস্তা পরস্পরকে লম্বভাবে ছেদ করেছে অনেকটা প্লাস চিহ্নের মতো । মাঝে একটি চৌমাথা যেখানে দুজন সিভিক পুলিশ চলাচল নিয়ন্ত্রন করছে । আমরা ভারতীয়রা চারটি রাস্তাতেই হাটতে পারি, দাঁড়াতে পারি, ছবি তুলতে পারি, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ শুধু নিজেদের করিডর দিয়েই জাতায়াত করতে পারে , দাঁড়াতে পারেনা ! সকাল বেলায় আমাদের সামনা দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ জন কাজের জন্য পারাপার করছে । তিনটে বাংলাদেশের ট্রাক্টর পাটগ্রাম থেকে দহগ্রাম প্রবেশ করল । পার্কে বসে ছবি তুললাম কিছু । পার্কটী তেমন আহামরি সুন্দর না হলেও জায়গাটির ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব কম নয় ।
তিনবিঘা করিডোরের মাঝে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলে যাতায়াতের রাস্তা । তিনবিঘা করিডোরের চারপাশে কাটাঁতারের বেড়া । ১৯৭৪ এর ১৬ই মে ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমান চুক্তি অনুসারে ভারত ও বাংলাদেশ তিনবিঘা করিডোর ( ১৭৮ বাই ৮৫ মিটার ( ৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু )) ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর ( ৭.৩৯বর্গ কিলোমিটার ( ২.৮৫ বর্গ মাইল )) সার্বভৌমত্ব পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করে । এর ফলে উভয় দেশেই তাদের ছিট মহলে যথাক্রমে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর যাতায়াত সুবিধা তৈরি হয় । ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ চুক্তি অনুসারে সাথে সাথেই দক্ষিণ বেরুবাড়ী ভারতের কাছে হস্তান্তর করে যদিও ভারত তিনবিঘা করিডোর বাংলাদেশের কাছে রাজনৈতিক কারনে হস্তান্তর করেনি । এটি হস্তান্তরে ভারতের সাংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছিল । পরবর্তিতে বাংলাদেশ সরকারের অনেক বিরোধিতার পর ২০১১ সালে ভারত পূর্ণভাবে এটি বাংলাদেশকে দেওয়ার বদলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ইজারা হিসাবে দিয়েছিল এই শর্তে যে একই সময়ে দক্ষিণ বেরুবাড়ি ভারতের নিয়ন্ত্রানেই থাকবে । ১২ নং দক্ষিণ বেরুবাড়ী ইউনিয়নের মোট আয়তন ২২.৫৮ বর্গকিলোমিটার ( ৮.৭২বর্গমাইল ), যার ১১.২৯ বর্গকিলোমিটার ( ৪.৩৬বর্গমাইল ) বাংলাদেশ পেয়েছিল । এছাড়াও পূর্বের ভাগ অনুসারে কোচবিহারের চার টিছিটমহল বাংলাদেশে পড়েছিল যার আয়তন ৬.৮৪ বর্গকিলোমিটার ( ২.৬৪বর্গমাইল ), এভাবে মোট আয়তন ১৮.১৩ বর্গকিলোমিটার ( ৭.০০বর্গমাইল ) যা বাংলাদেশে স্থানান্তর হওয়ার কথাছিল । ১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী এই ভূখন্ড গুলোর মোট জনসংখ্যার ৯০ %ই ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী । পক্ষান্তরে বাংলাদেশের ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ভারতে হস্তান্তরের কথাছিল । যার মোট আয়তন ১৮.৬৮ বর্গকিলোমিটার ( ৭.২১বর্গমাইল ) ও ১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৮০% ছিল মুসলমান । যদি এই হস্তান্তর সফল হতো তাহলে এটি জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকত । ফলে তখন বেরুবাড়ীর জনগণ এই হস্তান্তরের বিরোধিতা করেছিল । ১৯৭১ এরপর ভারত বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয় বেরুবাড়ীর অর্ধাংশ ভারতের অধীন থাকবে এবং দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাংলাদেশেই থাকবে । এই চুক্তি অনুসারে ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাসীর বাংলাদেশের মূলভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটি তিনবিঘা আয়তনের জায়গা ইজারা হিসেবে দিয়েছিল । এটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল এবং তিনবিঘার চার পাশে সতর্কতার সাথে বেষ্ঠ্যনী দেওয়া হয়ে । ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত ১.১৪ ধারা অনুসারে বেরুবাড়ী বিরোধের অবসান ঘটে ।
চুক্তি অনুসারেঃ “ভারত দক্ষিণ বেরুবাড়ীর দক্ষিনাংশের অর্ধেক নিয়ন্ত্রন করবে যার আনুমানিক আয়তন ৬.৮ বর্গকিলোমিটার ( ২.৬৪বর্গমাইল ) এবং বিনিময়ে বাংলাদেশ দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা নিয়ন্ত্রন করবে । ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাসীদের বাংলাদেশের মূলভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৭৮ বাই ৮৫ মিটার ( ৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু ) আয়তনের একটি ভূমি বাংলাদেশকে ইজারা হিসেবে দিবে ।” বাংলা আয়তন পরিমাপের একটি একক বিঘা থেকে তিনবিঘা নামের উৎপত্তি, ভূমিটির মোট আয়তন ১,৫০০ থেকে ৬,৭৭১ বর্গ মিটার ( ১৬,১৫০ থেকে৭২,৮৮০বর্গফুট ) যা তিন বিঘা পরিমাপের সমান । পূর্বে করিডোর টি দিনের ১২ ঘন্টা সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হত, এতে দহগ্রাম আঙ্গরপোতার অধিবাসীদের কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হত কারন সে সময় সেখানে কোন হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলনা । ২০১১ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার একটি চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে করিডোরটি ২৪ ঘন্টাই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে । ২০১১ সালের ১৯ শে অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা কর্তৃক আনুষ্ঠানিক ভাবে করিডোরটি উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয় ।
সূত্র: https://bn.m.wikipedia.org/wiki/তিনবিঘা_করিডোর
পাশেই একটি চায়ের দোকান সদ্য খুলছে । খুচরো নেই তাই ইচ্ছে থাকলেও কপালে জুটলনা । এবার প্রদীপদার ইচ্ছে হল গাড়ী চালানোর হাতটিকে আরেকটু পাকিয়ে নিতে । এমনিতে ফাঁকা রাস্তা, চাপ নেই ! তাই আমরাও হেলেদুলে ধীরে সুস্তে রিসোর্টে ফিরে এলাম । আজই আমাদের ফিরে স্কুল ধরতে হবে তাই ইচ্ছে থাকলেও চলেযেতে হচ্ছে ।
ফেরার পথে এক ঝলক দেখে নিলাম Land Port Authority of India এর নির্মীয়মাণ চ্যাংরাবান্ধ্যা স্থলবন্দর ও নিউ চ্যাংরাবান্ধ্যা ষ্টেশন । এখন এই চ্যাংরাবান্ধ্যা বুড়িবাড়ি সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে সড়ক পথে শিলিগুরি ঢাকাগামী ভূতল পরিবহনের বাস পরিসেবা রয়েছে । এছাড়া রয়েছে দুই দেশের পণ্য পরিবহন । পথের পাশেই চোখে পড়ল বিশাল ট্রাক টারমিনাস । কে বলতে পারে আগামীতে এখান দিয়েই চলতে শুরু করবে সেই সোনালী অতীতের কোলকাতা কোচবিহার ভায়া রংপুর দূরপাল্লার ট্রেন ।
এবার বিদায় তবে |
ফেরার পথে এক ঝলক দেখে নিলাম Land Port Authority of India এর নির্মীয়মাণ চ্যাংরাবান্ধ্যা স্থলবন্দর ও নিউ চ্যাংরাবান্ধ্যা ষ্টেশন । এখন এই চ্যাংরাবান্ধ্যা বুড়িবাড়ি সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে সড়ক পথে শিলিগুরি ঢাকাগামী ভূতল পরিবহনের বাস পরিসেবা রয়েছে । এছাড়া রয়েছে দুই দেশের পণ্য পরিবহন । পথের পাশেই চোখে পড়ল বিশাল ট্রাক টারমিনাস । কে বলতে পারে আগামীতে এখান দিয়েই চলতে শুরু করবে সেই সোনালী অতীতের কোলকাতা কোচবিহার ভায়া রংপুর দূরপাল্লার ট্রেন ।
নিউ চ্যাংরাবান্দা স্টেশন |
স্মৃতি যেন জোনাকী.......!! July 04, 2016. Cooch Behar
|
No comments:
Post a Comment