প্রদত্ত ভূসংস্থানিক মানচিত্রটির নম্বর 45 D/7 যা ভারতের গুজরাট রাজ্যের বানসকাথা জেলা এবং রাজস্থান রাজ্যের সিরোহি জেলার অংশবিশেষ। প্রতিনিধিত্বমূলক স্কেল 1:50000 অনুসারে মানচিত্রটির মোট ভৌগোলিক আয়তন আনুমানিক ৭২০ বর্গ কিমি এবং অঞ্চলটি ২৪ ডিগ্রি ১৫ মিনিট উত্তর অক্ষরেখা থেকে ২৪ ডিগ্রী ৩০ মিনিট উত্তর অক্ষরেখা এবং ৭২ ডিগ্রী ১৫ মিনিট পূর্ব দেশান্তর থেকে ৭২ ডিগ্রি ৩০ মিনিট পূর্ব দেশান্তর রেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটি একটি ১৫ মিনিট X ১৫ মিনিট কোয়াডেন্ট্রাল শীট যা ভারতীয় সর্বেক্ষণ বিভাগ কর্তৃক ১৯৫৮-৬০ সালে প্রথমবারের জন্য জরীপ করা হয় এবং ২০০৫ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংযোগ করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল গিরিশ কুমারের তত্ত্বাবধানে ২০১৯ সালে প্রথম সংস্করণ হিসাবে মানচিত্রটি প্রকাশ করা হয়। মানচিত্রটির চুম্বকীয় বিচ্যুতি ২০১৫ সালে প্রকৃত উত্তর থেকে ১/২ ডিগ্রী ছিল যা প্রতিবছর পূর্ব দিকে ৩ সেকেন্ড করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানচিত্রটিতে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ এর বিবরণ কুড়ি মিটার ব্যবধানের সমোন্নতি রেখার দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে।
ভূ-প্রাকৃতি (PHYSIOGRAPHY)
প্রদত্ত ভূ-সংস্থানিক মানচিত্রে নির্দেশিত অঞ্চলটি দুটি স্বতন্ত্র ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগে বিভক্ত। মানচিত্রের পূর্বে অবস্থিত মালভূমি অঞ্চলটির উচ্চতা ৩০০ মিটার থেকে প্রায় ৯০০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখানকার উচ্চতম স্থান যশর হিল যার উচ্চতা প্রায় ১০০০ মিটারের কাছাকাছি। অন্যদিকে মানচিত্রের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে ক্ষয়জাত সমভূমি, যার স্থানে স্থানে উন্মুক্ত পাথরের টিলা দেখা যায়। বৈচিত্রহীন এই সমভূমি অঞ্চলের উচ্চতা ১০০ থেকে ২৬০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। পশ্চিম থেকে পূর্বে অর্থাৎ মালভূমির দিকে অঞ্চলটির গড় ঢাল ক্রমে বৃদ্ধি পেয়েছে।
জলনির্গমন ব্যবস্থা (Drainage System)
মানচিত্রটির প্রায় মাঝ বরাবর পূর্বদিক থেকে পশ্চিমদিকে বানস নদী বয়ে চলেছে। বানস নদীর প্রধান উপনদী হল বলরাম নদী যা খাজা নামক স্থানে মূল নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। শুষ্কমরু অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীখাতের মাঝে মাঝে চড়া ও দ্বীপ দেখা যায়। দান্তেওয়ারা নামক স্থানে নদীবাঁধ দেওয়ায় একটি জলাধারের সৃষ্টি হয়েছে। খালের মাধ্যমে এই নদীর জল সেচের কাজে ব্যবহৃত হয়। মরুভূমির আলগা শিথিল মাটির উপর দিয়ে নদীগুলি প্রবাহিত হওয়ায় নদী খাতের দুই তীরে স্থানে স্থানে খোয়াই ও নালি ক্ষয় দেখতে পাওয়া যায়। বানস নদীর ডান তীরের উপনদী গুলির মধ্যে আরাডো নদী, শারদ নদী এবং বাম তীরের উপনদী গুলির মধ্যে বলরাম নদী উল্লেখযোগ্য। অপরদিকে আরাবল্লী পর্বতের ব্যাবচ্ছিন্ন মালভূমির অংশ থেকে উৎপন্ন হয়ে ধলবা নদী দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে দাড়ি নামক স্থানে হারকা নদী নাম গ্রহণ করে পুনরায় পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে রামপুরা নামক স্থানে সিপু নদীতে মিশেছে। হারকা নদীর এ উপনদী হল হানভা নালা। সিপু নদী এই অঞ্চলের আরেকটি প্রধান নদী। গনেশপুরা নামক স্থানে সিপু নদীতে কৃত্রিম বাঁধ নির্মাণ করে একটি জলাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। এর জল বিভিন্ন খাল পথের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। উক্ত নদী গুলির পাশাপাশি আরো অনেক ছোট বড় অনিত্যবহ নদী রয়েছে যারা সমগ্র মানচিত্রের স্থানে স্থানে বৃক্ষরূপী, কেন্দ্র বিমুখ এবং সমান্তরাল জলনির্গমন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। মানচিত্রটির উত্তর পশ্চিম এবং দক্ষিণ দিকে বেশকিছু বালিয়াড়ি দেখাযায় যার মাঝে কিছু কিছু ক্ষণস্থায়ী জলধারার অস্পষ্ট ছাপ চোখে পড়ে। প্রসঙ্গত স্থানীয় মানুষ পানীয় জলের জন্য নদীগুলি অপেক্ষা কুয়োর উপর নির্ভরশীল তাই জনবসতিগুলির নিকটে একাধিক কুয়ো দেখা যায়।
জলবায়ু (CLIMATE)
মরু অঞ্চলে অবস্থানগত কারণে অঞ্চলটিতে স্বাভাবিকের থেকে বার্ষিক বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণ হয় যার পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ সেমির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। অপরদিকে স্থানটির গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা যেমন ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর উপর উঠে যায় তেমনি ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে রাতের বেলায় প্রায়শই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছে চলে আসে। বার্ষিক ও দৈনিক উষ্ণতার প্রসর (Range of Temperature) আবহবিকারে সাহায্য করে তাই স্থানে স্থানে একাধিক উন্মুক্ত শিলাস্তুপ ও টিলা দেখা যায়। প্রসঙ্গত অত্যধিক তাপমাত্রা অধিক বাষ্পীভবনে সাহায্য করে যার ফলে মরু উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়েছে।
● গ্রীষ্মকাল ( উষ্ণ শুষ্ক )- মার্চ থেকে জুন।
● বর্ষাকাল ( উষ্ণ আর্দ্র )- জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর ।
● শীতকাল ( শুষ্ক শীতল )- অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী।
স্বাভাবিক উদ্ভিদ (NATURAL VEGETATION)
মানচিত্রের উত্তর পূর্ব অংশে ঘন পর্ণমোচী বৃক্ষের বনভূমি দেখা যায়। এছাড়া মানচিত্রের পূর্বদিকে বানস ও সিপু নদীর মধ্যবর্তী দোয়াব অঞ্চলে সানান্য পরিমানে উন্মুক্ত বনভূমি দেখা যায়। মানচিত্রের প্রায় ২৫ শতাংশ স্থান বনভূমি অধিকার করে রয়েছে। এই অঞ্চলে প্রধানত দু প্রকার বনভূমি এখানে দেখা যায়, যেমন ব্যবছিন্ন মালভূমি অঞ্চলে বাঁশ ও শাল গাছের ঘন বনভূমি এবং অন্যদিকে সমভূমি অঞ্চলে যেখানে কৃষিকাজ অনুশীলন করা হয় না সেখানে কাঁটা জাতীয় ঝোপ ঝার, পাম ও ঘাসের জংল দেখা যায়।
জীবিকা (OCCUPATION)
অঞ্চলটির প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রামবাসী ঘোড়া, উট, ভেড়া ইত্যাদি গবাদি পশু প্রতিপালন করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে। এদের মধ্যে সিরোহী জাতের ছাগল প্রতিপালন জনপ্রিয়। জলবায়ুর সাথে সঙ্গতি রেখে যেসকল শস্য চাষ করা হয়ে থাকে তা নিম্নরূপ।
● শীতকাল ( রবি শস্য ): – গম, বার্লি এবং তুলা।
● বর্ষাকাল ( খারিপ শস্য): – বাজরা, জোয়ার, ভূট্টা।
জনবসতি ও যোগাযোগ (SETTLEMENTS & COMMUNICATION)
প্রদত্ত ভৌগলিক অঞ্চলের উল্লেখ করার মতো জনবসতি বলতে দান্তেওয়ারা, চিত্রাসেনি এবং পান্থাওয়ারা ইত্যাদি । চিত্রাসেনি জনপদের মধ্যদিয়ে জাতীয় সড়ক ১৪ এবং পশ্চিম রেলপথের প্রধান শাখাটি অবস্থান করছে। রেলষ্টেশনের পাশাপাশি ডাকঘর, থানা প্রভৃতি নাগরিক পরিসেবা চিত্রাসেনি জনপদে রয়েছে। অপরদিকে মালভূমি অঞ্চলে একাধিক ছোট ও মাঝারি জনপদ দেখা যায় যাদের মধ্যে পেদার, ধিবরি, গঙ্গুওয়ারা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই জনপদ গুলি প্রধানত বনভুমির কাঠ চেরাই, উপজাত দ্রব্য সংগ্রহ প্রভৃতির কারনে গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি দক্ষিণের বালিয়াড়ি অঞ্চলে বেশকিছু বসতি দেখাযায় যেমন বদরপুরা, ভাঘরোল, সাংলা, মোতি ভাতামল, আন্ত্রলি, ভাকর ইত্যাদি। বিদ্যুৎ সরবরাহ কমবেশি বর্তমান। সমগ্র অঞ্চলটিকে বিভিন্ন প্রকার সড়ক পথ জালের মতো জড়িয়ে রেখেছে তাই পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা মোটের উপর ভালো।
পরিশেষে উপসংহারে একটি কথা বলা যায় যে প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক মাপকাঠির বিচারে অঞ্চলটি আজো পিছিয়ে রয়েছে। সমগ্র অঞ্চলটির জনবসতি গুলি আজো আধুনিক নাগরিক পরিসেবা থেকে অনেক দূরে অনুন্নয়নের তিমিরে অবস্থান করছে।
Original Topo Map Source: https://www.surveyofindia.gov.in/pages/educational-map-series
No comments:
Post a Comment