চেন্নাই বা তামিলনাড়ু সম্পর্কে আমার ধারনা বলতে ওই হিন্দি ডাব করা সাউথ ইন্ডিয়ান মুভিসের মতো । অত্যন্ত লাউড । মনে পড়ে, একবার পুরী থেকে ভুবনেশ্বর বাসে করে যেতে হয়েছিল । ভিডিওকোচ বাস । সিনেমার নাম ‘ইন্দ্র দা টাইগার’ । একে তীব্র গরম, তাতে আবার সিনেমায় বিভিন্ন চরিত্রের অনর্গল আস্ফালন, প্রান প্রায় ওষ্ঠাগত । ভিলেন, সেতো লাদেনের থেকেও ভয়ানক, আর নায়ক ? সে নাচলে মেঘ থেকে বৃষ্টিহয়, রাগলে মানুষ শেষ বারের মতো শুয়েপড়ে ! বাস থেকে নামার পর প্রায় দুই গ্লাস ডিস্প্রিন খেয়ে সেই যাত্রায় রক্ষে পাই । আমার এক দিদি বলেছিল যখন দেখবি বায়ে সমুদ্রের জল স্থির আর চারিদিকে দুর্গন্ধ,
বুঝবি সামনেই চেন্নাই ! ভিতরে বসে আছি তাই দুর্গন্ধ পেলামনা, তবে জানতে পারলাম
বেসিন ব্রীজ জংশন । এর পরেই চেন্নাই । জানিনা এখনেই ইতিহাসের বসিনের সন্ধি হয়েছিলো
কিনা ? চেন্নাই সেন্টাল স্টেশনে আমাদের ট্রেন পৌছালো বিকাল পাঁচটা নাগাদ । কামড়া
থেকে নেমে বুঝতে পারলাম চেন্নাইএর গরম কি জিনিস ! স্টেশন থেকে বের হতে হতে একেবারে
ঘেমে স্নান করে ফেলেছি । বাইরে দেখি কাতারে কাতারে মানুষ বাস ধরার জন্য দাড়িয়ে ।
আমাদের যা ব্যাগ পত্র তাতে বাসে উঠা বেশ চাপের । এর আগে কমল ট্যাক্সি করে গেলেও
এবার বোধ হয় হাতেখড়ি দেবে ! বাসের নম্বর 54B গন্তব্য পোরর, পোনামাল্লীর আগে । কিছুপরে একটা ফাকা বাস এলো পোনামাল্লী লেখা
কিন্তু ভির নেই ! কমল দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করাতে কন্ডাক্টর বলল ইল্লা ন্ ন্ কিন্তু
জালানার পাশে বসা একজন ভদ্রলোক বলে উঠলেন Yes, come…
come… ! যা বাবা, দুজনের দুরকম কথা ! একেতো ভিড়, তাতে এতো ব্যাগ, সময় বলতে কয়েক
মুহূর্ত ! উঠেই পড়লাম বাসে । ভিড় থেকে তো বাঁচা যাবে ! ফাকা বাস তাই যেখানে খুশি
বসে পড়লাম । এবার তিনি যা বললেন তার মানে এই দাড়ায় যে ‘বাসটি পোনামাল্লী থেকে আসছে, সামনে ব্রডওয়ে বাসস্ট্যান্ড, সেখান থেকেই এটি আবার
পোনামাল্লী রওনা দেবে, তখন আমরা পোররএ নামতে পারবো’ । প্রথম পরীক্ষায় পাশ করলাম আমরা !
পোরর পৌছতে রাত আটটা বেজে গেল । সুতরাং খেয়ে দেয়ে ঘুম । পরদিন কমল গেল কাজে । আমিও
গেলাম পিছ পিছে । সেখানেই দুজনে খওয়া দাওয়া করে বের হলাম । দুপুর দুটো । এবার যাব
মেরিনা বীচ দেখতে । এবার আমার পালা । এক ডাব আলা আছে তাকেই জিজ্ঞাসা করলাম । সে
আমাকে হাত নেড়ে মাথা নেড়ে অনেক বোঝালো । বুঝলাম শুধু ইল্লা ইল্লা আর ছেরি ছেরি ও আর আপ্পুরি-য়ায়া ! প্রায় মিনিট খানেক কাঠালের পাতা চিবোনোর পর
মনে হল আমার চয়েসটাই ভুল । এরপর একজন ভদ্রস্থ লোককে জিজ্ঞাসা করায় উনি বললেন 11H নম্বর গাড়িতে উঠতে । ব্রডওয়েতে পৌছানোর পর সেখান থেকে আবার মেরিনা বিচের বাস ধরতে হবে । সেই বাসের নম্বর A2 । চেন্নাইতে কোন
শিক্ষিত বয়স্ক পুরুষ বা মহিলাকে একবার স্যার বা আম্মা বলে কিছু জিজ্ঞাসা করলেই
হয়েছে, মাথায় হাত- পিঠে চাপড় দিয়ে ছেলে না বানানো পর্যন্ত নিস্তার পাওয়ার কোন চান্স নেই !
আমদেরই
ভুল, তারাহুরতে 11H এর বদলে 11E নম্বর বাসে উঠে পড়লাম ।
কন্ডাক্টর বললেন এটাতেও ব্রডওয়ে যেতে পারবেন তবে ভেদাপালানিতে গিয়ে বাস চেঞ্জ করতে
হবে ! তাই হোক, শহরটাতো ঘোরা হবে । শহরের প্রতিটি রাস্তার মোড়ে, উচু উচু বাড়ি
গুলিতে রাজনৈতিক পোস্টার ব্যানার ও কাটআউটে ছয়লাপ । আমাদের এখানকার প্রায় সব রাজনৈতিক দলের
পোস্টারে বেশিরভাগ নেতা নেত্রী হাতজোড় করে ভোট চেয়ে থাকে । এখানে, চেন্নাইতে
ব্যপারটা আলাদা । শহরের প্রায় প্রতি রাস্তার বিভিন্ন মোরে একজন রাজনৈতিক নেতার ইয়া বড় বড় ছবি
কাটআউট প্রায়ই দেখালাম । লাল লাল ভাঁটার মত চোখ, শরীরে রুদ্রাক্ষের মালা, মোটা রেকট্যাঙ্গল গোঁফ, সাদা হাফশার্ট, সাদা হাফলুঙ্গি, মানে অ্যাপিয়ারেন্স দেখলে মনে মনে লুঙ্গিতে গোঁজা কাটারিটা কল্পনা করে নিতে
একটুও ভুল হবে না, আর এটাও ভেবে নেওয়া যায়, ঐ কাটারি দিয়ে লোকটা এইমাত্র কারও মাথা বডি থেকে আলাদা করে এসেছে। সেই রকমের
মুখে মানুষকে প্রায় আঙ্গুল দেখয়ে ভোট চাওয়া ! এই হল পোস্টার ! এক জায়জায় তো তাঁকে দেখলাম, মানে ছবিত, তিনিই নেতাজি,
তিনিই ভগৎ সিং, তিনিই মঙ্গলপান্ডে ......... বাপরে আরতো পারা যায়না ! একই অঙ্গে বহুরূপ ! পরে বুঝেছি এতো লাউড কেন ? রাজনীতিও এখানে সিনে ড্রামাটিক ওয়েতে চলে আরকি । জয়ললিতা করুণানিধি সবাই একসময়ের নামকরা অভিনেতা অভিনেত্রী । তাঁরাও ওই !
ভেদাপালানী
বাস স্ট্যান্ডের পাশে একটি সিনেমা হল রয়েছে । সিনেমা ও সিনেমাহলের নাম কোনটাই পড়তে
পারলামনা । তবে পোস্টারটি এ কদিনে চেন্নাইএর রাস্তায় অনেকবার দেখেছি । পোস্টারে দেখলাম এককাধ চুল নিয়ে একটি ছেলে সরসা ক্ষেতের মধ্যে ছুটছে,
হাতে রামপুরী ! অভিপ্রায় বলার অপেক্ষা রাখেনা । অবশেষে ব্রডওয়ে বাস
স্ট্যান্ড থেকে A2 নম্বর
বাসে মেরিনা বিচে পৌছলাম । ভাঁড়া মাত্র ৫ টাকা । মাদ্রাস ইউনিভারসিটির সামনে নামিয়ে দেবে । সাব ওয়ে
ব্যবহার করুন, সামনেই মেরিনা সমুদ্র সৈকত । চেন্নাই শহরে সময় কাটানোর একটি ভালো
জায়গা হল মেরিনা বীচ । বিকালে মোটামুটি একটা ছোট মেলা বসে । খাবার, জামা জুতো,
খেলনা বেলুন কি নেই ! ঘোড়া উট সবই আছে । চাইলে উঠে ঘুরতে পারেন । ছবি তুলতে পারেন
। দূরে বীচের মধ্যে একটি তাবুতে জোরে জোরে মাইক বাজছে, জেনারেটর আলো ফ্যান সবই আছে
। এখান থেকে মনে হচ্ছে তাবুর চারিদিকে অনেক ছেলে মেয়ে
দাঁড়িয়ে আছে । কাছে গিয়ে দখি এতো চাঁদেরহাট ! কে নেই সেখানে ? অমিতাভ সলমন শারুক
কাজল রানী প্রিতি এমনকি জয়ললিতা করুণানিধি কে নেই ? মানে কাটআউটে ! এই মেরিনা
বীচেই পাওয়া যায় এক মাত্র সুযোগ নিজের পছন্দের নায়ক নায়িকা, রাজনৈতিক নেতা নেত্রী,
ক্রিকেটার সবার সাথে ছবি তোলার ! প্রমান সাইজের পঞ্চাশ ষাটটি কাটআউট বাশে হেলান
দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । যাকে পছন্দ, তার ঘাড়ে কোমরে হাত দিয়ে দাড়ালেই হল । ১০ মিনিটে
ফটো রেডি ! দক্ষিনা ৫০ টাকা । জানিনা এমনও কতজন আছে যারা এই ফটোগুলি তুলে নিয়ে
গিয়ে বাড়ির দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখে ! সত্যিই Incredible India !
এর পর গেলাম আন্না স্কয়ারে । মেরিনা বীচের পাশেই তৈরি করা হয়েছে তামিলনাড়ুর প্রিয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রামচন্দ্রের বিশাল স্মৃতিসৌধ । সমাধি বেদী অনেকটা রাজঘাটের গান্ধীজীর মতো । মসাল জ্বলছে । বেদীতে কান রাখলে নাকি আন্না কথাটা শোনা যায় ! দু- তিন বার ট্রাই করলাম । আরনা অনেক হয়েছে ! এরপর নিজেকেই ছাগল মনে হবে । চারপাশ গাছপালা দিয়ে ঘেরা । এই গরমে ছায়াতে বসে থাকতে ভালই লাগল । কাছেই চিপক স্টেডিয়াম । এবার গেলাম সেখানে । আইপিএল নেই তাই গেটে বিশাল বড় তালা । এখন ফিরছি অ্যানিবেসান্ত রোড ধরে ।
এই কদিনে বীচরোড, মাউন্ট রোড বা আন্না সালাই, প্রেয়ার কর্নার, থাউজেন্ট লাইট, গিন্ডি কেকেনগর মুখস্ত হয়ে গেছে । এখন যাব CMBT বা চেন্নাই মফসিল বাস টার্মিনাস বা পেরেম্বেডু তে । সেখানে গিয়ে খোজ নিতে হবে পন্ডিচেরী তিরুপতির বাস কখন ছাড়ে ইত্যাদি । দুপুরে রাস্তা প্রায় ফাকা । একজন ভদ্রলোক সাদা জামা কালো চশমা পড়ে অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে দম দিচ্ছেন ! তাকেই জিজ্ঞাসা করি ? যেই না বুঝতে পেরেছে তার দিকে যাচ্ছি সঙ্গে সঙ্গে ম্যান সুপার ম্যানের আদল নিয়ে ফেলেছে । একটা বড় পাথরের উপর বা পা রেখে দুই হাত ঘুরিয়ে রজনীকান্ত স্টাইলে উলটো আমায় জিজ্ঞাসা করল Any Problem ? হারিব্বা ! হকচকিয়ে আমিই বললাম No Thanks ! সে বিজয় সুলভ কলগেট হাঁসি দিয়ে অফিসে ঢুকে গেল । এখান থেকে CMBT এর ভাঁড়া ১৪ টাকা । আলু তালু ব্রহ্মতালু সব খোজ নিয়ে আসতে রাত হয়ে গেল ।
এই কদিনে বীচরোড, মাউন্ট রোড বা আন্না সালাই, প্রেয়ার কর্নার, থাউজেন্ট লাইট, গিন্ডি কেকেনগর মুখস্ত হয়ে গেছে । এখন যাব CMBT বা চেন্নাই মফসিল বাস টার্মিনাস বা পেরেম্বেডু তে । সেখানে গিয়ে খোজ নিতে হবে পন্ডিচেরী তিরুপতির বাস কখন ছাড়ে ইত্যাদি । দুপুরে রাস্তা প্রায় ফাকা । একজন ভদ্রলোক সাদা জামা কালো চশমা পড়ে অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে দম দিচ্ছেন ! তাকেই জিজ্ঞাসা করি ? যেই না বুঝতে পেরেছে তার দিকে যাচ্ছি সঙ্গে সঙ্গে ম্যান সুপার ম্যানের আদল নিয়ে ফেলেছে । একটা বড় পাথরের উপর বা পা রেখে দুই হাত ঘুরিয়ে রজনীকান্ত স্টাইলে উলটো আমায় জিজ্ঞাসা করল Any Problem ? হারিব্বা ! হকচকিয়ে আমিই বললাম No Thanks ! সে বিজয় সুলভ কলগেট হাঁসি দিয়ে অফিসে ঢুকে গেল । এখান থেকে CMBT এর ভাঁড়া ১৪ টাকা । আলু তালু ব্রহ্মতালু সব খোজ নিয়ে আসতে রাত হয়ে গেল ।
বিষদে পড়ার জন্য ক্লিক
করুন
পন্ডিচেরী থেকে ফিরে আমরা চেন্নাইএর যেখানে উঠেছি তার নাম হোটেল রাম লক্ষী । হাটা পথে চেন্নাই সেন্টাল স্টেশন, সামনেই রিপন
বিল্ডিংস বা চেন্নাই মেট্রোপলিটন কর্পোরেশন । ব্যালকনী থেকে দেখা যায় লোকাল ট্রেন
গুলি সামনের পার্ক স্টেশন ছেড়ে চলে যাচ্ছে । তবে রিপন বিল্ডিংসের সামনের পার্কটি
এখন মেট্রোরেল স্টেশন তৈরির কাজে মুছে গেছে । আমাদের হোটেলের সামনের রাস্তা দিয়ে ২
মিনিট পায়ে হাটা পথে রয়েছে নেহেরু স্টেডিয়াম । বিকালে গেলাম সেখানে । ভালোই লাগলো । চেন্নাই শহরে অফিস আওয়ারে হাজার হাজার বাইক স্কুটি নিয়ে নারী পুরুষ
উর্দ্ধশ্বাসে নিজেদের গন্তব্যে ছুটছেন কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কারো মাথায় হেলমেট
নেই । অনেকে তো দেখি খালি পায়ে বাইক চালাচ্ছেন ! প্রতি মোরে ট্রাফিক আছে তবে তা বাস ট্রাকের জন্য ।
আমার মতে চেন্নাই শহর ঘোরার ভালো সময় দুপুর বেলা । এই সময় সিটি বাস গুলি ফাকাই থাকে । তবে ভির থাকলেও পকেট মারের ভয় নেই । কন্ডাক্টর ভুলেও কাছে আসবেনা , তাই নিজেকেই উঠে গিয়ে টিকিট কাটতে হবে ! কদিনেই চন্নাই বেশ ভালো লেগে গেছে । মানুষ জন যথেষ্ট সৎ । চেন্নাইএর মানুষকে দেখে শেখার আছে, তাই অন্যের দেখাদেখি এখানে, আমারও ভিড় বাসে বয়স্ক পুরুষ বা মহিলাকে আসন ছেড়ে দিতে ভালই লাগে ! হোটেলের যে ছেলেটি আমাদের সার্ব করত সে আবার আগরতলার ! বাংলা বোঝে , তার কাছেই জানলাম ইল্লা (Not yes) মানে ‘না’ আর সেরি (Not Sorry) মানে ‘ওক্কে’। আমরা উত্তর ভারতের মানুষ যখন উপর নিচে মাথা দোলাই মানে ‘ঠিক ঠিক’, আবার ডানে বায়ে যখন মাথা দোলাই মানে ‘কখনই নয়’ । তামিলে এটি উলটো । পন্ডিচেরী নিজেরাই ঘুরে এসেছি । বাসের টাইম টেবিল কিছুই জানিনা । চেন্নাই ফিরে হোটেল পেতে সমস্যা হয়েছিল । তাই বাকি দুটি টুর ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে করার কথা ভাবলাম ।
বিষদে পড়ার জন্য ক্লিক
করুন
মহাবলী পূরম কাঞ্চী পূরম ঘুরে এসছি । মাঝে একটা দিন রেস্ট । কি করি ? শেষে খোজ নিয়ে জানলাম শহরেই অনেক দেখার আছে । হোটেলের থেকে একটা আইডিয়া ও রুট চার্ট নিয়ে রওনা দিলাম । বাসে বাসে । প্রথমে চন্নাই গভমেন্ট মিউজিয়াম । ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ নিষেধ । যা বাবা ! লকারও নেই ! অগত্যা পালা করে ঢুকতে হল । ভিতরটা নম নম করে সারলাম । বাইরে যা পারলাম তুললাম । তবে মন ভরলো না বস ।
হোটেলের ছেলেটির কাছেই শুনে ছিলাম চেন্নাইএ কেনাকাটি করার ভালো জায়গা বলতে টি নগর । সেখানেও গেলাম । বিশাল বিশাল শপিং মল । এক একটি প্রায় দশ তলা । একই ছাদের নিচে সোনাদানা থেকে তরকারিপাতি সবই আছে । দেখি, সবাই জুতো খুলে দোকানে ঢুকছে ! কমল কিনল জামা, আমি কিনলাম প্যান্ট । এদিকের খাবার দোকান গুলি অনেকটা উত্তর ভারতের মতো । ভালো খাবার দাবার পাওয়া যায় । মন ভরে খেলাম এখানে । কাল আবার যাব লর্ড তিরুপতি দর্শনে । সকালে উঠতে হবে তাই খেয়ে দেয়ে ঘুম ।
বিষদে পড়ার জন্য ক্লিক
করুন
কাল রাত ১ টা নাগাদ হোটেলে ফিরেছি তিরুপতি থেকে । ভাগ্য ভালো তাই রাস্তায় ঘুমোতে হয়নি । দারোয়ান গেট খুলে দিয়েছে । আসলে তামিলদের কমিটমেন্ট দায়ব্ধতা দেখার মতো । আগের দিন রাতে মালিকের এক ভাইকে বলেছিলাম কাল ভোর পাচটায় তিরুপতি যাব । ঠিক বলে রেখেছে । আজ আবার সারা দিন রেস্ট । সন্ধ্যায় বের হবো বাড়ির জন্য কিছু কেনাকাটি করতে হবে । ঘরে বসে একটা ডাব করা তামিল সিনেমা দেখলাম । নাম মগধীরা । এখন আর তেমন খারাপ লাগছে না । হয়ত ভালো মন্দের মিশেলে ধাতস্ত হয়ে গেছি ।
প্রায় ৬-৭ দিনে তামিলনাডুর
অনেক গ্রাম শহর দেখলাম । তামিলনাড়ুর গ্রামগুলি অনেকটা মণিরত্নমের রোজা সিনেমার “ রুক্মিনী...
রুক্মিনী... ” গানটার মতো । একগাদা বুড়ি আর এক আধজন সুন্দরী ! কিছু করার নেই ! “Sometime ordinary looking girls are
to encircle the heroine to shown her unequal beauty.” এটা স্ক্রীনে
কনট্রাস্ট আনার জন্য কিনা জানিনা, তবে দক্ষিন ভারতের গ্রামীন চিত্রপট তাইই বলে । অধিকাংশই মানুষই মাঝবয়েসী, কি বুড়োবুড়ি। যাকেই দেখি তারই
পাকা চুল, চুল থেকে বেরুচ্ছে তেলের গন্ধ, চুলে গোঁজা সাতসকালের বেলফুলের মালা
যা অর্ধেক শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। একেকজন বুড়ির আবার কী অদ্ভূত রকমের শখ, মুখে
হলুদবাটা মাখা মেখে বসে আছে ! গ্রামের ছেলেরা তাদের মা ঠাকুমাদের যথেষ্ট সম্মান
করে । শহুরে আদপ কায়দা হয়ত এদের নেই কিন্তু এদের সম্বল বলতে আছে মা ঠাকুমার ন্যায় পরায়ণতার শিক্ষা, প্রতিকূল অবস্থাতে
টিকে থাকার জেদ, আর অসম্ভব জাত্যাভীমান । বেশিরভাগ গ্রামের রাস্তার মোড়ে দুজন ভগবানের মুর্তি
দেখাযায়, পাশাপাশি বসে আছেন । হয়ত দুই ভাই কিংবা দুই বন্ধু হবেন । হয়ত আমাদের মতো
! কিন্তু এখানেও সেই স্টাইল! ভাঁটার মতো চোখ, ভগৎ সিং এর মতো মোচ, তাই ভক্তি কম
ভীতি বেশী । রাতে হঠাৎ দর্শন হলে, নিজের বুকে থুতু দিতেও হতে পারে ! গ্রামের ছেলেদের খেলাধুলাও এক বিচিত্র রকমের । ষাঁড়ের লেজ ধরে তাঁকে বাগে আনা । রোমান কলোসিয়ামে ম্যাটাডোররা যা করত লাল রঙের পতাকা দেখিয়ে এখানে তাঁরা করছে হাজার জনের মাঝে প্রায় খালি হাতে । কি আসুরিক প্রবৃত্তি । এইতো পেপারে পড়লাম জালিকাট্টি নামক স্থানে এই রকম এক খেলায় প্রায় ৯০ জনের মতো আহত হয়েছে । উচ্চ শিক্ষিত
পরিবার গুলির কথা জানিনা তবে মধ্য ও নিম্নবিত্ত সামাজে নারীরা যে পুরুষের পায়ের
নীচে অবস্থান করে তা সেখানকার লোকেদের আচরণেই বোঝা যায় ।
এবার আসি শহরের মানুষ জনের কথায় । ট্রেনে আসার সময় অন্ধ্রপ্রদেশ সীমানায় একদল কালো জামা প্যান্ট এবং কালো উত্তরীয় পরা মানুষ উঠেছিল । আমিতো ভেবে ছিলাম খবর হয়েছে ! ট্রেনে ডাকাত পড়েছে ! পরে একজন বলায় বুঝলাম এরা ধর্মপ্রান তামিল, মানত আছে তাই এরা একমাস খালি পায়ে কালো জামা কাপড় পরে দাঁড়ি না কেটে থাকবে । চেন্নাই শহরে বাটা- উডল্যান্ডের এতো জুতোর দোকান তবুও অধিকাংশ তামিল সাধারন মানের চটি নয়তো খালি পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । এমকি শুনলাম এরা নাকি বিশেষ দিন বা তিথিতে খালি পায়ে অফিস স্কুল কলেজেও যায় । এটাই এদের স্ট্যাটাস সিম্বল । ছেলে মেয়েদেরও জামা কাপড় তেমন জমকালো নয় । অত্যন্ত সাধারন মানের । মহিলারাও কেমন রংচটা শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে । বাসে সবাই মোবাইলে হয় নেট করছে না হয় বই খুলে নিজের পড়া পড়ছে । Simple living and high thinking বোধ হয় একেই বলে । ব্রাহ্মণরা হাল্কা গেরুয়া রঙের ধুতি লুঙ্গির মতো করে পরে । যেমন ফর্সা তেমন ভুরি । সোনায় দানায় বাপ্পি লাহিড়ী ! তবে চলেছেন খালি পায়ে । ধনী ব্যবসায়ীদের পয়সা কেমন তা চেন্নাইয়ের শপিং মল বা শোরুম গুলি দেখে আন্দাজ করাযায় । দামি দামি মার্সেডিস অডি BMW গাড়ী বাড়ির সমনে রাস্তায় পরে আছে ।
আসলে তামিলনাড়ুতে ঘুরতে ঘুরতে যে জিনিসটি প্রকট ভাবে চোখে বিধল তা হলে গ্রাম ও শহরের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈপরীত্য । বিজ্ঞানের কল্যাণে কৃষির অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটলেও শহরকেন্দ্রিক অর্থনীতির কাছে তা নস্যি । শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি দিচ্ছে । নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করছে । গ্রামগুলি তাই আজ ফাকা ! অপর দিকে স্বল্প শিক্ষিত কৃষিজীবি মানুষ হোক বা শহরের বস্তিতে থাকা স্বল্প আয়ের মানুষ তাঁরা কখনই নিজেদের শহরের চিকুরীজিবী, ইন্ডাস্ট্রি বা আইটি সেক্টরের ঝা চকচকে লোকেদের সাথে নিজেকে মেলাতে পারেনা । তাই হাড়ভাঙা খাটুনির পর তাদের থাকতে হয় লুঙ্গিড্যান্স কিংবা অতিমানবীয় চরিত্রের আশ্রয় নিয়ে নতুবা মনের অভিলাসা পূরন করতে হয় সাগর তীরের রঙ্গীন কাটআউটের পাশে দাঁড়িয়ে ফটো তুলে !
হাতে আর বেশি সময় নেই তাই হোটেলে চেক আউট করে সোজা দৌড় । কোলকাতা হয়ে বাড়ি ফিরতে হবেত ! সুতরাং বিদায় সবুজ নগরী চেন্নাই ।
আসলে তামিলনাড়ুতে ঘুরতে ঘুরতে যে জিনিসটি প্রকট ভাবে চোখে বিধল তা হলে গ্রাম ও শহরের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈপরীত্য । বিজ্ঞানের কল্যাণে কৃষির অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটলেও শহরকেন্দ্রিক অর্থনীতির কাছে তা নস্যি । শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি দিচ্ছে । নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করছে । গ্রামগুলি তাই আজ ফাকা ! অপর দিকে স্বল্প শিক্ষিত কৃষিজীবি মানুষ হোক বা শহরের বস্তিতে থাকা স্বল্প আয়ের মানুষ তাঁরা কখনই নিজেদের শহরের চিকুরীজিবী, ইন্ডাস্ট্রি বা আইটি সেক্টরের ঝা চকচকে লোকেদের সাথে নিজেকে মেলাতে পারেনা । তাই হাড়ভাঙা খাটুনির পর তাদের থাকতে হয় লুঙ্গিড্যান্স কিংবা অতিমানবীয় চরিত্রের আশ্রয় নিয়ে নতুবা মনের অভিলাসা পূরন করতে হয় সাগর তীরের রঙ্গীন কাটআউটের পাশে দাঁড়িয়ে ফটো তুলে !
হাতে আর বেশি সময় নেই তাই হোটেলে চেক আউট করে সোজা দৌড় । কোলকাতা হয়ে বাড়ি ফিরতে হবেত ! সুতরাং বিদায় সবুজ নগরী চেন্নাই ।
No comments:
Post a Comment