আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়, উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত লেখচিত্র অংকন ও তার ব্যাখ্যা বা আলোচনা। একাদশ শ্রেণির প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় একটি ১২ মাসের উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের তালিকা দেওয়া থাকবে। এই তালিকা দেখে আমাদের ছক্ কাগজের বা গ্রাফ পেপারের উপরে একটি লেখচিত্র অংকন করতে হবে।
![]() |
গোলার্ধ নির্ধারণ
পরীক্ষায় শুধুমাত্র লেখচিত্রটি অংকন করলেই হয় না, বরং এটি কোন গোলার্ধের উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত নির্দেশ করছে তাও দেখাতে হয়। গোলার্ধ নির্ধারণের সব থেকে উল্লেখযোগ্য পদ্ধতিটি হল উষ্ণতা নির্দেশক যে সরল বক্ররেখাটি অংকন করা হয়েছে ( লাল রঙের রেখা ) তার শুরু এবং শেষ বিন্দুটি বরাবর একটি স্কেল ধরে দেখতে হবে, উপেরর ছবিতে আঁকা সবুজ সরল রেখা । কি দেখব ? এবার দেখতে হবে উষ্ণতা নির্দেশক যে সরল বক্ররেখাটির মাঝের অংশটির উপরের দিকে না নিচের দিকে অবস্থান করছে ? যদি মাঝের অংশ সবুজ রেখার উপরের দিকে অবস্থান করে তবে অঞ্চলটি উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। কিন্তু ওই উষ্ণতা সূচক বক্ররেখাটির মাঝের অংশ যদি সবুজ রেখার নিচের দিকে অবস্থান করে তবে অঞ্চলটি দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত।
এবার আসি একটু আলাদা রকম লেখচিত্রে, যদি উষ্ণতা সূচক সরল বক্ররেখাটি প্রায় সমান্তরাল ভাবে বা সর্পিলাকারে অবস্থান করে, যার উপর স্কেল ফেলে কোনভাবেই গোলার্ধ নির্ধারণ করা যাচ্ছে না, তখন বুঝতে হবে এটি নিরক্ষীয় অঞ্চল। নিচে আলোচনা করা আছে।
জলবায়ু নির্ধারণ
জলবায়ু নির্ধারণ একটু জটিল হলেও বিষয়টি বেশ মজার। একটু মনোযোগ দিয়ে দেখো আশাকরি ভালো লাগবে তোমাদের ।
A. যে মাসে উষ্ণতা সবথেকে বেশি তাকে আমরা গ্রীষ্মকাল বলব অপরদিকে যে মাসে উষ্ণতা সবথেকে কম তাকে আমরা শীতকাল বলব।
B. যে মাসে সব থেকে বেশি বৃষ্টিপাত তাকে আমরা বলব আর্দ্র। অপরদিকে যে মাসে বৃষ্টিপাত সব থেকে কম তাকে আমরা বলব শুষ্ক।
এখন উপরের A এবং B শর্ত গুলি থেকে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের আরো কিছু নমুনা পাওয়া যায়, যেমন -
১. গ্রীষ্মকাল + বর্ষাকাল = আর্দ্র গ্রীষ্মকাল।
২. গ্রীষ্মকাল + বৃষ্টিহীন = শুষ্ক গ্রীষ্মকাল।
৩. শীতকাল + বর্ষাকাল = আর্দ্র শীতকাল।
৪. শীতকাল + বৃষ্টিহীন = শুষ্ক শীতকাল।
উপরে চারটি নমুনা থেকে আমরা দুটি জলবায়ু অঞ্চল খুব সুন্দর ভাবে সনাক্ত করতে পারি, যেমন মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চল এবং ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল। গোলার্ধ যাই হোক না কেন এদের জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্য একই রূপ থাকবে।
মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চল = আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং শুষ্ক শীতকাল।
উপরের ছবি দুটি ভালো করে দেখো। গোলার্ধ যাই থাক দেখো মৌসুমী জলবায়ুর চরিত্র্য হল গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত। দক্ষিন ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলিতে যেমন – ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস প্রভৃতি দেশে মৌসুমী জলবায়ু দেখা যায়। অপর দিকে দক্ষিণ গোলার্ধে অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাংশের কুইন্সল্যান্ডে, আফ্রিকার মোজাম্বিক ও মাদাগাস্কার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা প্রভৃতি অঞ্চলে আংশিক ভাবে মৌসুমী জলবায়ু দেখা যায়।
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল = শুষ্ক গ্রীষ্মকাল এবং আর্দ্র শীতকাল।
প্রধানত ভূমধ্যসাগরীয় তীরবর্তী অঞ্চলে এই প্রকার জলবায়ু দেখা যায় বলে এই প্রকার নামকরণ। পাশাপাশি মহাদেশ গুলির পশ্চিমে এই প্রকার জলবায়ু লক্ষ্য করা যায়। যেমন আমেরিকার লস এঞ্জেলাস ক্যালিফোর্নিয়া, এশিয়া মহাদেশের লেবানন তুরস্ক মরক্কো, ইউরোপের পর্তুগাল ইতালি স্পেন, দক্ষিন আফ্রিকার কেপটাউন, দক্ষিণ আমেরিকার চিলি এবং অস্ট্রেলিয়ার পার্থ প্রভৃতি স্থানে এই প্রকার জলবায়ু দেখা যায়।
অর্থাৎ ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো রৌদ্রকরজ্জ্বল আবহাওয়া, শীতকালে বৃষ্টিপাত এবং শুকনো গ্রীষ্মকাল। তোমরা ছবি দুটির জলবায়ুগত চরিত্র লক্ষ্য করো, গোলার্ধ পরিবর্তন হলেও এর জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্য একই রয়েছে।
নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল
নিরক্ষীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য হল সারা বছর ( প্রতি মাসে ) প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত এবং সমান উষ্ণতা। প্রসঙ্গত, নিরক্ষীয় জলবায়ুর উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত সূচক লেখচিত্রটি উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের ক্ষেত্রে প্রায় একই প্রকার হয়।
কিন্তু যদি দেখা যায়, সারা বছর প্রচন্ড উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত একেবারেই নেই, যদিও বা হয় তবে তা খুবই সামান্য, তবে কোন প্রকার জলবায়ু হবে? তোমরা নিশ্চয়ই বুঝেগেছ, এখানে উষ্ণ মরু জলবায়ুর কথা বলা হয়েছে।
উষ্ণ মরু জলবায়ু
এবার আমরা একটু উল্টো ছবি কল্পনা করি। যদি দেখা যায় সারা বছর খুবই কম, কখনো কখনো উষ্ণতা হিমাংকের নিচে নেমে গেছে,সারা বছর বৃষ্টিপাতের বা তুষারপাতের পরিমাণ সামান্য, তবে বুঝতে হবে মেরু জলবায়ু বা তুন্দ্রা জল বায়ু।
মেরু জলবায়ু বা তুন্দ্রা জল বায়ু
উত্তর গোলার্ধের কানাডা আলাস্কা নরওয়ে সুইডেন ফিনল্যান্ড এবং এশিয়ার সাইবেরিয়ায় তুন্দ্রা জলবায়ু দেখা যায়।
আশাকরি বিষয়টি তোমরা নিশ্চয় বুঝুতে পেরেছো। যদি কোথাও বুঝতে অসুবিধা হয় অবশ্যই জানিও । আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করব। সকলে ভালো থেকো। ধন্যবাদ সকলকে।
Priyankar Roy @ Protected Content ©
Protected Blog Page
Right-click, printing, saving, and copying are disabled.
Scroll works normally. Enjoy reading safely!













No comments:
Post a Comment